ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ফের ক্ষমতায় ক্যামেরনের দল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৫
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ফের ক্ষমতায় ক্যামেরনের দল সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন সস্ত্রীক ডেভিড ক্যামেরন

ঢাকা: ক্ষমতাসীন মধ্য-ডানপন্থি কনজারভেটিভ পার্টির শাসনেই আস্থা দেখালো যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ জনগণ। বৃহস্পতিবার (৭ মে) সম্পন্ন ৫৬তম জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দলের প্রার্থীদেরই সর্বোচ্চ ভোট দিয়েছেন তারা।

সংসদের (হাউস অব কমন্স) ৬৫০ আসনের মধ্যে ৩৩১ আসনে জয়লাভ করে ফেলেছেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীরা। এর ফলে এককভাবে সরকার গঠন নিশ্চিত হয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায়) ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়ালস ও নর্থ আয়ারল্যান্ডের ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, চলে স্থানীয় সময় রাত ১০টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা) পর্যন্ত। পাঁচ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৭৫ শতাংশ এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

ভোটগ্রহণের পর শুরু হয় ভোট গণনা। গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ হতে থাকে। প্রথম দিকে লেবার পার্টির প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার খবর আসতে থাকলেও ধীরে ধীরে ফলাফলে জয়ের পাল্লা ভারী হতে থাকে কনজারভেটিভ পার্টির। শুক্রবার (৮ মে) বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৯টার দিকে হাউস অব কমন্সের ৬৫০ আসনের সবগুলোর ফলাফল ঘোষণা শেষ হয়। এতে ৩৩১ আসনে জয় নিয়ে এককভাবে সরকার গঠন নিশ্চিত করেছে কনজারভেটিভ পার্টি। আর ২৩২টি আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি। এছাড়া, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) ৫৬ আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

আর বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি জয় পেয়েছে ৮ আসনে। সেইসঙ্গে ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকেআইপি) পেয়েছে ১ আসন। অন্য দলগুলো জয় পেয়েছে ২২ আসনে।

শতকরা হিসাবে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর লেবার পার্টির পক্ষে ভোট পড়েছে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ।

এবারের নির্বাচনে অবিশ্বাস্যভাবে ৩৩১ আসন পাওয়া কনজারভেটিভরা আগেরবারের নির্বাচনে পেয়েছিল ৩০৬ আসন। সে কারণে তাদের লিবারেল ডেমোক্রেটদের সঙ্গে জোট বেধে সরকার গঠন করতে হয়েছিল। অপর দিকে আগেরবারের নির্বাচনে ২৫৮ আসন পেয়ে ৫৫তম সংসদে দাপুটে বিরোধী ছিল লেবার পার্টি। এবার ২৬ আসন হারাতে হয়েছে মিলিব্যান্ডের দলকে। অবশ্য, পরিষ্কারভাবে ২৪ আসন বেশি পেয়েছে ক্যামেরনের দল।

এ নির্বাচনে জয়লাভের ফলে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ‍ডাউনিং স্ট্রিটে উঠছেন ডেভিড ক্যামেরন। নির্বাচনের ফলাফলে ক্ষমতাসীনদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের খবরে রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসে যুক্তরাজ্যের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে ছুটে যান ক্যামেরন। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করে ফলাফল জানান এবং এককভাবে ‘নতুন ধারা’র সরকার গঠনের কথা বলেন।

রাণীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর ক্যামেরন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কনজারভেটিভ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নতুন ধার‍ার সরকার গঠন করবেন।

তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য আগের মতোই সরল- আমাদের যুক্তরাজ্যে ‘সবার জন্য রাষ্ট্র’ ভিতের ওপর সরকার পরিচালনা। আমি আমাদের দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই, আমাদের যুক্তরাজ্যকে ঐক্যবব্ধ করতে চাই। আমরা কখনো এক জাতি, এক যুক্তরাজ্যের সংহতি হারাতে দেবো না। ’

নির্বাচনে জয়লাভ করায় বিশ্ব নেতাদের অভিনন্দনের স্রোতে ভাসছেন ডেভিড ক্যামেরন ও তার দল। ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের সরকার-রাষ্ট্রপ্রধানরা।

তবে, ক্যামেরন প্রশংসায় ভাসলেও নির্বাচনে হারের গ্লানি নিয়ে দলের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন

প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ড, ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান ও উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দল ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির (ইউকেআইপি) প্রধান নিগেল ফ্যারেগ। নির্বাচনে লড়াই করা ছোটখাটো দলগুলোর নেতৃত্বেরও পদত্যাগের খবর দিচ্ছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। তবে, রাজনৈতিক প্রতিযোগীরা পদত্যাগ করলেও ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করছেন না।

বিশ্ব গণমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারী প্রার্থীই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে বিজয়ী হয়েছেন। তারা সবাই লেবার পার্টির পক্ষে লড়াইয়ে অংশ নেন। এদের মধ্যে রুপা হক লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন থেকে, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্ন থেকে এবং রুশনারা আলী বেথনেল গ্রিন ও বো থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

রুপা হক পেয়েছেন ২২ হাজার ২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী অ্যাঙ্গি ব্রে পেয়েছেন ২১ হাজার ৭শ’ ২৮ ভোট। নির্বাচনী এলাকায় রুপা হকের পক্ষে পড়েছে ৪৩ শতাংশ ভোট।

টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক পেয়েছেন ২৩ হাজার ৯শ’ ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির সিমন মার্কজ পেয়েছেন ২২ হাজার ৮শ’ ৩৯ ভোট। নির্বাচনী এলাকায় টিউলিপের পক্ষে পড়েছে ৪৪ শতাংশ ভোট।

নারী প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছেন রুশনারা আলী। তিনি পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩শ’ ৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভের ম্যাথিউ স্মিথ পেয়েছেন ৮ হাজার ৭০ ভোট। নির্বাচনী এলাকায় রুশনারার পক্ষে পড়েছে ৬১ শতাংশ ভোট।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫/ ২১৫৪ ঘণ্টা
আরএইচ/এইচএ

** দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ক্যামেরন
** ফের ক্ষমতায় ক্যামেরনের দল
** নির্বাচনে পরাজয়ে পদত্যাগ মিলিব্যান্ড, ক্লেগ, ফ্যারেগের
** কনজারভেটিভ ২৯৩, লেবার ২১৯

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।