ঢাকা: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার পূর্বপুরুষদের নির্যাতন কেন্দ্র পালমিরার টাডমর কারাগারের ভেতরের ছবি প্রকাশ করেছে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা।
গত ২১ মে সিরিয়ার হোমস প্রদেশের ঐতিহাসিক পালমিরা নগরী দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা।
শহরটির পতনে হোমস প্রদেশে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে ও রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসরে আইএসের ভিত্তি আরও শক্ত হল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সিরিয়ার রাজধানী শহর থেকে পালমিরা ২শ’ ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
পালমিরা দখলের পরপরই প্রাচীন টাডমর কারাগারের ছবিগুলো প্রকাশ করে আইএস। এই কারাগারে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার পূর্বপুরুষদের বিরোধী পক্ষের সমর্থকদের আটক করে নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রকাশ হওয়া ছবিগুলোতে কারাগারটির জানালাবিহীন ছোট কক্ষগুলো দেখা যায়, যেখানে অভিযুক্তদের আটক করে রাখা হতো। বিশাল ইস্পাতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই কক্ষগুলোয় কয়েদিকে সঙ্গ দিতে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই থাকতো না।
টয়লেট হিসেবে ব্যবহারের জন্য কক্ষগুলোর কোণায় মেঝেতে একটা করে ছোট গর্ত রয়েছে। কারাগারের দেয়ালগুলো স্যাঁতস্যাঁতে। সেই সঙ্গে সিরিয়ার তীব্র ও দীর্ঘ শীত নিবারনে সেখানে কোনো উষ্ণতার ব্যবস্থাও নেই।
তীব্র শীত ও অন্ধকারে কী করে কয়েদিরা দিনের পর দিন অতিবাহিত করেছে, তার একটা আভাস প্রকাশ হওয়া ছবিগুলোতে দেখা যায়। কারাগারের গলিগুলো ভাঙ্গচোরা। পুরো ভবনটি দেখলে মনে হবে কয়েক দশক আগে এটি পরিত্যাক্ত হয়েছে। অথচ গত সপ্তাহ পর্যন্তও টাডমর কারাগারটি কয়েদিতে পূর্ণ ছিল। কিন্তু ছবিগুলো দেখার পর তা বিশ্বাস করা যে কারোর জন্যই কঠিন হয়ে পড়বে।
১৯৮০ সালের ২৭ জুন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাবা, তৎকালীন সিরীয় প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদকে ইসলামিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডেরে গুপ্তঘাতকরা হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থ হলে সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের টাডমর কারাগারে বন্দি করা হয়। হামলার পরদিনই প্রেসিডেন্টের ভাই রিফাত আল-আসাদ দেশের প্রতিরক্ষা ব্রিগেডকে কারাগারে প্রবেশ করে বন্দিদের হত্যার নির্দেশ দেন। ধারণা করা হয়, এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয় সেসময়।
এরপর থেকেই এই কারাগার আসাদ রাজত্বের একটি নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, পালমিরা দখলের পর ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সিরিয়ায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থার দাবি, ২১ মে পালমিরা পতনের পর এ পর্যন্ত প্রায় তিনশ’ জনকে হত্যা করেছে আইএস। এছাড়া লড়াইয়ের সময় সিরীয় বাহিনীর অন্তত পাঁচশ’ সেনা নিহত হয়েছে।
তবে আইএসের দাবি, তারা টাডমর কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্ত করে দিয়েছে। এ সংক্রান্ত কিছু ছবিও প্রকাশ করেছে তারা। তবে ছবিগুলোর সত্যতা এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করতে পারেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৫
আরএইচ