ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

স্টুটগার্টের চিঠি

বরফের দুনিয়া থেকে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৮
বরফের দুনিয়া থেকে বরফের দুনিয়া থেকে। ছবি: সংগৃহীত

স্টুটগার্ট (জার্মানি) থেকে: শুধু আজ (বৃহস্পতিবার) নয়, বিগত কয়েকটি দিন চরম শৈত্য প্রবাহে কাতর হয়ে আছে। দিন আর রাত্রিগুলো বরফে বরফে মোড়ানো।  বসন্তের প্রত্যাশা মাখানো গাছের একটি পাতাও মনে হয় সাহস পাচ্ছে না উঁকি দেওয়ার। হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় থরথর কম্পন চলছে সর্বত্র। বইছে পেঁজা তুলোর মতো কুয়াশা জড়ানো তীব্র শীতল বাতাস। জার্মানি ও সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর আবহাওয়া এখন এমনই কঠিন শীতে ঢাকা।

ঘর থেকে জানালার ঝাপসা কাচের ওপারে দেখি, বড় বড় গাছগুলো পাতাহীন কঙ্কাল হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তুলো তুলো তুষার ঝরেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশে যেমন টাপুর টুপুর বৃষ্টি, জার্মানিতে ছমছম তুষার আর বরফ। আদি অন্তহীন শ্বেত চাদরে আবৃত পৃথিবী মনে হয় রঙহীন। শাদা ছাড়া আর কোনও কালার সহ্যই করতে পারছে না প্রকৃতি।

এই বিষণ্ন, মন-খারাপ-করা, নিঃসঙ্গ শীতলতাকেও ভালোবেসে উষ্ণতায় ভরিয়ে তুলে ইউরোপের মানুষেরা।  বেশিরভাগ লোক বরফে মোড়ানো পৃথিবীকে ভালোবেসে উপভোগও করে। আমরা যেমন বৃষ্টি ভালোবাসি। বৃষ্টিতে আনন্দে ভিজতে পছন্দ করি, এখানে মানুষ খুবই পছন্দ করে তুষারপাত ও বরফ।  

শীতল আবহে মনে হয় যেন ঈদ এসেছে বরফের দুনিয়ায়। বেশিরভাগ বাচ্চারা বড়দের সাথে বরফ দিয়ে খেলতে চলে যায় বাইরে। ভারী ও গরম পোশাকে ফিটফাট হয়ে বরফের মাঠে মেতে ওঠে মজার মজার খেলায়। শীতে কাবু হয়ে ঘরে বসে থাকার লোক নয় এদের মানুষ। ঘরের দরজা বন্ধ করে লেপের তলে পালিয়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

শীতের হুল্লোড়ে কাজ বাড়ে মায়েদের। বাড়ির সামনে বেশ বড় দেখে পানি নেবার পাপোশ না রাখলেই নয়! বেশির ভাগ বাড়ি কার্পেটে মোড়ানো। পানি পড়লে কি অবস্থা হবে? কোনো কোনো বাড়ি কাঠের। সেটির অবস্থা ভালো রাখতে আর মজার মজার খাবার বানাতে মায়েরা সর্বক্ষণ তৎপর থাকেন। অর্থাৎ শীতকে এড়িয়ে থাকতে চায় না কেউ। উপভোগ করতে এগিয়ে আসে সবাই।

প্রবাসের এমন প্রকৃতিতেও আমি কেন যেন খুব অল্পতেই অনেক বেশি খুশি হয়ে যাই, আর কারও কাছে কখনও তেমন প্রত্যাশাও করি না। প্রকৃতি এতো বৈচিত্র্য দিয়েছে, আর কি চাই!

আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই শিক্ষাটি আরও বেশি উপলব্ধি করেছি যে, যার চাহিদা যত কম সে তত সুখী, যে যত প্রকৃতিপ্রেমিক, সে তত তৃপ্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।