গোপন আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েল সফর করছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ একটি প্রতিনিধি দল। ইন্দোনেশিয়ারও একটি প্রতিনিধি দলও এ আলোচনায় অংশ নেবে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় জেরুজালেম পোস্ট। খবরে বলা হয়, চলতি সপ্তাহের শেষে একটি গোপন আলোচনায় অংশ নিতে পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ইসরায়েল এসেছেন। সপ্তাহের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে দলটির।
দলটিতে রয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোশাররফের সরকারের উন্নয়নমন্ত্রী ও পাকিস্তান ক্রিকেট কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান নাসিম আশরাফ। তিনি নয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া দলটিতে আরও রয়েছেন চার পাকিস্তানী নাগরিক, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও একজন একজন ব্রিটিশ পাকিস্তানি ইমাম।
এ ছাড়া করাচিভিত্তিক সাংবাদিক আহমেদ কুরাইশিও রয়েছেন প্রতিনিধি দলে। গত জুনে ইসরায়েল সফরের কারণে তাকে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
ভূ-রাজনীতি, ইতিহাস এবং ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তিসহ জল প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে প্রতিনিধি দলটি। আলোচনা শেষে দলটিকে পুরো ইসরায়েল ঘুরে দেখার সুযোগ দেওয়া হবে।
পাকিস্তানকে কয়েকটি বিশেষ কৌশলগত কারণে গুরুত্ব দিয়ে থাকে ইসরায়েল। এর একটি হলো, দেশটির কাছে থাকা অপারেশনাল পারমাণবিক সক্ষমতা। একমাত্র মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের কাছে এ সক্ষমতা রয়েছে। অপরটি ইরানের সঙ্গে সীমান্ত।
পাকিস্তান ছাড়াও গোপন এ সফরে গেছে ইন্দোনেশিয়ার একটি দল। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের সাম্প্রতিক উষ্ণতার মধ্যে দেশটিতে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুটি মুসলিম দেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
২০২১ সালের শেষ কয়েক মাসে সিরিজ মিটিং, এ থেকে আসা বিবৃতি ও প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মুসলিম ও ইহুদি দেশটির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। বাণিজ্য ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও সহযোগিতা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল ও ইন্দোনেশিয়া।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও গত ডিসেম্বরে জাকার্তায় সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ইসরায়েলের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে চুক্তি হলে এর বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানান পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ফিলিস্তিনিদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, অন্যদের পথ অনুসরণ করে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না পাকিস্তান। অন্য দেশগুলো যা করে করুক, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। কয়েদ ই আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা) ১৯৪৮ সালে এনিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যতদিন না ফিলিস্তিনিদের তাদের অধিকার দেওয়া হবে এবং একটি স্থায়ী আবাস হবে ততদিন আমরা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পারি না। ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তির পর ইসলামাবাদের অবস্থান নিয়ে ইমরানের বক্তব্যের কারণে ধন্যবাদ জানায় ফিলিস্তিন দূতাবাস।
অথচ, সে অবস্থান থেকে সরে গিয়ে দেশটির সাবেক এক রাজনৈতিক ইসরায়েল সফর করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২
এমজে