ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভটভটি চললেই কাঁপে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

এম এম ওমর ফারুক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
ভটভটি চললেই কাঁপে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার ভাঙাসেতু।

নড়াইল: নড়াইল ও মাগুরার সংযোগ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ার ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত ঝামারঘোপ সেতু। কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে সেতুটির মাঝখানে ভেঙে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোন সংস্কার হয়নি।

ফলে প্রতিদিনই আতঙ্ক আর মৃত্যুঝুঁকি জেনেও চলাচল করছে হাজারও মানুষ।

প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার মধ্যেই জমির ধান নেওয়া, সাধারণ পথচারীদের চলাচল আর স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করছে এলাকাবাসী। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে বা ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সেতুর একপ্রান্তে অর্ধেক জায়গাজুড়ে ধসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো জায়গায় গর্ত হয়ে ভেতরের রড বের হয়ে পড়ে। দুই বছর আগে একটি ট্রাক চলতে গিয়ে হেলে পড়ে সেতুটি। এরপর স্থানীয়রা গর্ত হওয়া স্থানে কয়েকটি কাঠের বড় তক্তা দিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান আর কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে পারাপার করছেন। নসিমন আর ভটভটি চললেই কাঁপতে থাকে সেতুটি, তবুও বাধ্য হয়েই চলছে পারাপার। সেতুর তলদেশের অবস্থা আরও করুণ। ইটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর নিচের দুটো গার্ডারের একটি ধসে একদিকে হেলে পড়েছে। পিলারের ইটগুলো খুলে সেখানে পাখির বাসা তৈরি হয়ে তাও খসে পড়ছে।

স্থানীয় কৃষক রহমত আলী বাংলানিউজকে জানান, একপাশের জমির ধান কেটে ঘোড়ারগাড়ি করে বাড়িতে নিতে হয়। প্রতিদিনই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। ভয় লাগে কখন জানি ব্রিজ ভেঙে নিচে পড়ে যাই, তবুও মৃত্যুঝুঁকি জেনেও যেতে হয়।

খলিশাখালি গ্রামের ব্যবসায়ী আকবর মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, এই সেতুটি ভাঙা থাকার কারণে আমাদের মিঠুাপর হাটে যেতে গেলে নোহাটা ঘুরে আট কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। আমাদের এই দুর্দশা কেউ দেখে না।  

স্থানীয় যুবক ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিজেরাই চলাচলের জন্য কাঠ দিয়েছি, চেয়ারম্যান আর এলাকার বড় নেতাদের জানানো হয়েছে। কেউ খেয়ালই করেন না এদিকে।  

ঝামারঘোপ গ্রামের খলিশাখালী প্রাইমারী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র বিল্টু দাস বাংলানিউজকে জানায়, আমরা ভয়ে ভয়ে ব্রিজ পার হয়ে স্কুলে যাই। অনেক সময় ভ্যান যেতে চায় না তাই হেঁটেও যেতে হয়।  

জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ রাখেন না এমন প্রশ্নের জবাবে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিকদার হান্নান রুনু বাংলানিউজকে বলেন, সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরাতো সবাইকে জানিয়েছি। আর সরকারি কাজ তো কচ্ছপগতিতে চলে।  

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঝামারঘোপ খালের ওপর নির্মিত হয় ১৩ মিটার দৈর্ঘের ছোট এই সেতুটি। স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ঘুরে দেখেছে, ফটো তুলে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছে।  

সেতুর ঝুঁকির কথা স্বীকার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লোহাগড়া উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মো. জসীম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের চাহিদায় ধান মৌসুম পর্যন্ত রাখা হবে। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে নতুন ব্রিজ হতে সময় লাগবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।