ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাদক কারবারে বাধা দিলেই মাটিচাপা দিতেন স্বপন, বন্ধুও নিখোঁজ এক মাস

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
মাদক কারবারে বাধা দিলেই মাটিচাপা দিতেন স্বপন, বন্ধুও নিখোঁজ এক মাস মাদক সম্রাট স্বপন মিয়া। নিচে তোফাজ্জল ও সীমার মরদেহ উদ্ধারের চিত্র।

সাভার (ঢাকা): সাভারের কুখ্যাত মাদক সম্রাটের নাম স্বপন মিয়া। তিনি মুক্তিযোদ্ধার ছেলে পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাভারে মাদক কারবারি করে আসছিলেন।

পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর হয়রানির অভিযোগ করতেন স্বপন। মাদক বিক্রিতে বাধা কিংবা পুলিশকে তার তথ্য দিলেই জীবিত মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করতেন তিনি। সম্প্রতি পুলিশের সোর্স সীমা বেগম হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে মেলে এসব তথ্য। এর ভিত্তিতে স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় আরও একজনের হাড়গোড়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১১ জুন) ভোরে সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্বপনের সাভারের বাড়ির মেঝে খুঁড়ে ১৪ মাস আগে নিখোঁজ তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনোর মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার করে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগে গত ৬ মে স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়ির পাশ থেকে সীমা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বপনের স্ত্রীকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করায় তাকেও জীবিত মাটিচাপা দেয় স্বপন ও তার সহযোগীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বপনের সহযোগী কালুর সঙ্গে মারামারি হওয়ার পর থেকে তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনোর বন্ধু ইলিয়াস হোসেনও প্রায় ১৫ মাস ধরে নিখোঁজ আছেন। তার পরিবারের দাবি, তাকেও স্বপন ও তার সহযোগী কালু মিলে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়েছেন।

নিখোঁজ ইলিয়াস হোসেনের ভাই শাহ-আলম বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে মাদক কারবারি স্বপনের সহযোগী কালুর বিরোধ চলছিল। বিরোধের জেরে আমার ভাইয়ের সঙ্গে কালুর মারামারি হয়। এরপর গত ২০২৩ সালের ৯ মে সকালের নাস্তা করে বের হয়ে যাওয়ার পর তিনি আর ফিরে আসেননি। আমার ভাইকেও স্বপন ও তার সহযোগী কালু মিলে হত্যার পর গুম করেছে।

নিখোঁজ ইলিয়াস (৩৫) সাভারের শাহীবাগ এলাকার মৃত কালু মিয়ার ছেলে। তিনি সম্প্রতি মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার হওয়া তোফাজ্জল হোসেন টোনোর বন্ধু ছিলেন। তোফাজ্জল হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় ১ মাস আগে ইলিয়াস নিখোঁজ হন। নিখোঁজ ইলিয়াসেরও খোঁজ করবে ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ। একই সঙ্গে স্বপনের ওপর আনা অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, আমি এই এলাকায় সবার আগে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছি। তিন বছর আগেও স্বপন আড়াই হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতো। বাসা ভাড়ার টাকা না দিতে পারায় এলাকায় সালিশ করে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর মাদক কারবারি ও ইয়াবা বিক্রি করে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। আনন্দপুরের ৫ শতাংশ জমির ওপর এই দুইতলা বাড়িটি বছর খানেক আগে নির্মাণ করেন তিনি। তবে সেখানে তিনি থাকতেন না। মূলত সেখানে তিনি মাদক কারবারি পরিচালনা করতেন। ওই বাড়ি ছাড়াও স্বপনের বিরুলিয়া ও মজিদপুরসহ অন্য স্থানে আরও চার-পাঁচটি বাড়ি আছে বলে শুনেছি। আজ আনন্দপুর এলাকায় তার বাড়িতে সকাল থেকে ডিবি পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। শুনেছি, বাড়ির ভেতরে একাধিক মানুষকে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন স্বপন।

ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, স্বপনের বাড়িতে কিংবা তার আস্তানায় অভিযান চালানো যেতো না। তিনি উল্টো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর হয়রানির অভিযোগ করতেন। ফলে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন স্বপন। কিন্তু গত ১৩ মে স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সে সময় স্বপনের স্ত্রী পপিসহ যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে স্বপন পালিয়ে যান। পরে সোর্স সীমাকে জীবিত মাটিচাপা দেন স্বপন।

মাদক বিক্রির কৌশল সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা সাদ্দাম বলেন, স্বপন কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না। তিনি চা কিংবা সিগারেটও পান করতেন না। কিন্তু তার ছিল ভিন্ন এক নেশা। মাদক বিক্রি করতেন সুকৌশলে। সে দুই তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থেকে কৌটার ভিতরে ইয়াবা ভরে রশি লাগিয়ে নিচে ছেড়ে দিতেন। মাদকসেবী বা কারবারিরা সেখান থেকে ইয়াবা নিয়ে চলে যেতো। তবে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে তার বাড়িতে মাদক নিতে যেতো হতো।

পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, স্বপন প্রায় তিন বছর আগে আড়াই হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিতে পারতেন না। আজ সাভারে তার কয়েকটি বাড়ি আছে। প্রতিদিন স্বপন খুচরা ৬০০-৭০০টি ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করতেন। পাইকারি কত পিস বিক্রি করতেন তার খোঁজ নেই। মাদক বিক্রির টাকা দিয়েই তিনি এতো টাকার মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি দুই হত্যাকাণ্ডের দায়ে স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিখোঁজ আরও একজনের তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মুবাশ্শিরা হাবীব খান বলেন, নিখোঁজ ইলিয়াসের পরিবার ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ডিবি পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
এসবি/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।