ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাইবান্ধার নদ-নদীর পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৪
গাইবান্ধার নদ-নদীর পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় সবকটি নদ-নদীর পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ। শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা।

প্রকট আকার ধারণ করেছে গো খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও দেখা দিয়েছে কয়েকটি এলাকায়। লোকজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।

বুধবার (১০ জুলাই) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফিরতে শুরু করেছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন। তবে পানি কমলেও বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকার জেগে উঠছে নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাটসহ ঘরবাড়ির উঠান। পানি কমলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছে বন্যাকবলিত পরিবারগুলো। কৃষিভিত্তিক যাদের জীবন-জীবিকা তারা পড়েছেন বেকায়দায়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারগুলো।  

জেলায় এখনও পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন ৪০ হাজরেরও বেশি পরিবারের লক্ষাধীক মানুষ। পানি কমলেও দুর্ভোগ-ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না বন্যা দুর্গতদের। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষজন শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও দেখা দিয়েছে কয়েকটি এলাকায়। লোকজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। এবারের বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন ও আমন বীজতলাসহ ২ হাজার ৫০০ হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানি কমলেও ক্রমেই দুর্ভোগ-ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের।

বুধবার বিকেল ৩টার দিকে গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১১ সেমি হ্রাসের পরও বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি ৪ সেমি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপৎসীমার ৯৮ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  



এর আগে, গত ৫ জুন পর্যন্ত জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সর্বোচ্চ ৮৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি সর্বোচ্চ ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ওঠায় ১৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তিনটি দাখিল মাদরাসাসহ মোট ১৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা বিভাগ।  

চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

গাইবান্ধার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে জানান তিনি।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী নাহিদ রসুল বলেন, শুকনো খাবারসহ নগদ টাকা বানভাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। বানভাসিদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ চিকিৎসাসামগ্রী। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল, কৃষি, স্বেচ্ছাসেবক এবং লাইভস্টক টিম কাজ করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।