ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডে যমুনা রেলসেতু পার, বাঁচল সময় ৬ গুণ

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৫
৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডে যমুনা রেলসেতু পার, বাঁচল সময় ৬ গুণ

সিরাজগঞ্জ: সড়ক পথে যমুনা বহুমুখী সেতুর ওপর স্থাপিত রেলসেতু পার হতে যেখানে ১৮-২০ মিনিট সময় লাগতো। সেখানে নবনির্মিত যমুনা রেলসেতু পার হতে সময় লেগেছে মাত্র ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড।

উদ্বোধনী স্পেশাল ট্রেনটি পার হতে এই সময় নিয়েছে। এতে দেখা যায়, আগের থেকে প্রায় ৬ গুণ সময় কম লেগেছে।  

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বেলা ১২টা ১৬ মিনিটে পূর্বপারে সেতুর ওপর ওঠে স্পেশাল ট্রেনটি। ১২টা ১৯ মিনিট ২১ সেকেন্ডে ট্রেনটি সেতুর পশ্চিমপারে এসে নেমে যায়।  

এর আগে ১২টা ৯ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর ইব্রাহিমাবাদ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি শ্লথ গতিতে ছেড়ে যায়। তবে সেতুর ওপর উঠেই গতি বাড়িয়ে ১০০ কিলোমিটার করা হয়।  

যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, উদ্বোধনী ট্রেনটি পার হতে ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড সময় লেগেছে। কিন্তু তার আগে ট্রায়াল ট্রেনে ২ থেকে সোয়া ২ মিনিট লেগেছে। ফুল স্পিডে চালালে ২ মিনিটের মধ্যেই সেতু পার হবে।  
সেতুর পূর্বপার স্টেশন থেকে পশ্চিমের স্টেশন পর্যন্ত ৭-৮ মিনিট সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর ইব্রাহীমাবাদ স্টেশন থেকে ইঞ্জিনসহ ছয় বগির স্পেশাল ট্রেন পশ্চিমপার সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ স্টেশনে পারাপারের মধ্য দিয়ে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী ট্রেনে প্রধান অতিথি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামসহ রেলওয়ে কর্মকর্তা, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা ও সাংবাদিকরা যাত্রী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার সময় সয়দাবা রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকের ব্রিফিং করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর রেল সেতুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন সেখানে একটি সিঙ্গেল রেললাইন যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সরকার অনুভব করে যমুনা সেতুর ওপর আলাদা রেলসেতু হওয়ার প্রয়োজন। সেই তাগিদ থেকেই এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়।  

প্রকল্পটির অর্থায়ন করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা)। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাইকা আমাদের বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে সিঙ্গেল লাইনে ট্রেন যাওয়া আসা শুরু হয়। আর আজ ১৮ মার্চ দুটি লাইন উদ্বোধন হয়ে গেল। এরপর থেকে দুটি লাইনে রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে রেল যোগাযোগের নতুন তার উন্মোচন হলো। এই সেতুতে চলাচলকারী ট্রেনযাত্রীদের ভাড়া বাড়বে। ঢাকা থেকে রাজশাহী ৪০৫ টাকা ভাড়া ছিল, সেখানে ৪৫০ টাকা ভাড়া হবে।  

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনে চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।  

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মি. সাইদা শিনিচি ও জাইকার সাউথ এশিয়া ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেনারেল মি. ইতো তেরুয়ুকি। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান, জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইএইচআই -এর প্রতিনিধি
মি. শিনজি কাইফুকু ও ওটিটি প্রতিনিধি মি. মার্ক হ্যাবি যমুনা রেলসেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রকল্পটির ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা।

জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের সাত হাজারেরও বেশি কর্মীর টানা ৪ বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। সেতুটিতে ৫০টি পিলার, প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার হলেও দুদিকে ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।  

যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।  

তিনি বলেন, নির্মিত এই সেতুটি ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত সূচিত করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে সেটা আর থাকবে না। নির্মাণের পর সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহন খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজেই ঢাকাসহ সারাদেশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৫
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।