তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মব নয়। মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে দরকার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, আইনের শাসন, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র।
মাহফুজ আলম তার পোস্টে লেখেন, বাংলাদেশে প্রথম ‘মব’ ভায়োলেন্স হয়েছিল বিহারি জনগোষ্ঠীর ওপর। তারপরে মব হয় ছাত্র ও তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অথচ মুজিববাদবিরোধীদের ওপর। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি ইন্ধনে গত ৫৩ বছর মব হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর।
তিনি লেখেন, মবের ডেফিনিশন স্ট্রেইচ করলে তথাকথিত জনতার আদালত, জনতার মঞ্চ ’৯৬, ২৮ অক্টোবর, শাহবাগ- সবই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স। সামাজিক ফ্যাসিবাদ যে হাসিনার ১৬ বছরের রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদেরই প্রতিক্রিয়া এবং বিকার, তা না বুঝে সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও মব মানসিকতা মোকাবিলা অসম্ভব।
তিনি আরও লেখেন, ইসলামোফ্যাসিস্ট বলেই এ সমস্যার সমাধান হবে না। বরং, জুলাই যে ক্রস-ইডিওলজি ডায়ালগের সুযোগ তৈরি করেছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে এ সামাজিক ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে। এ ছাড়া গত ১৬ বছরের গণতন্ত্রহীনতা এবং আইনের শাসনের অবক্ষয় যে মব মানসিকতার জননী, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে।
উপদেষ্টা লেখেন, গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক ও সামাজিক ফ্যাসিবাদের অংশীদার না হয়েও হরেদরে মব ভায়োলেন্সের দায় নিতে হচ্ছে জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে। জুলাইয়ের পরে মব হলে বা সে সুযোগ তৈরি করা হলে এত সুশীলতা আর অ্যাপলজেটিক আলাপ আসত না। রাষ্ট্রের দায়িত্বে থেকে আমাদের কাজ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। সে জন্য মব ভায়োলেন্স নিয়ে কয়েকবার বলেছি। স্পেসিফিক কিছু অকেশনে। মাজারে হামলা নিয়ে, বইমেলা নিয়ে কথা বলেছি।
তিনি লেখেন, কিন্তু, উদ্বেগের বিষয় হলো, জুলাই বিপ্লবকে এখন মুজিববাদী বাম এবং লীগের কালচারাল গুন্ডারা জুলাই পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে মিলিয়ে এমনভাবে পোট্রে করছে, যেন জুলাই বিপ্লব শেখ মুজিবের নাতি জয়ের কথামতো মবোক্রেসি ছিল। মবোক্রেসি হলে জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা পুলিশ-আনসার বিহীন দেশকে এক-দেড় মাস নিরাপদ রাখত না।
তিনি আরও বলেন, সাজানো স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরকেও ছাত্র-জনতা বাঁচিয়ে দিয়েছিল। এ স্ক্রিপ্ট বিশ্বাসযোগ্য হবে বলে স্ক্রিপ্ট রাইটাররা ভেবেছেন এজন্যই যে, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা প্রতিশোধপরায়ণ ছিল না। জুলাই বিপ্লবে দেশকে আধিপত্যবাদ এবং ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করা মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে মব বলে জুলাইকে বিষোদগার করা বন্ধ করুন।
‘আইনের ব্যত্যয় ঘটলে, সাম্প্রদায়িক কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটলে আইনের আশ্রয় নিন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জুলাই বিপ্লবের পক্ষের ছাত্র-জনতাকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কিন্তু, মুজিববাদ ও আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আপনাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আমরা কারবালা পার হইতে পারিনি, এটাই সত্য। জুলাই ও লড়াই সমার্থক। ’
পুনশ্চ : মব মানে বিপ্লবী উদ্দেশ্যহীন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা লালন করা সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী। জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্য পরিষ্কার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা অতুল এবং তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, লেখেন উপদেষ্টা।
আরএইচ