ফেনীসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় ভারতীয় পানি আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিরসনে অবিলম্বে স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ঢাকাস্থ ফেনীবাসী নামের একটি নাগরিক সংগঠন।
শনিবার (১২ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
মানববন্ধনে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিগত সরকার ফেনীর প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ করেছে, তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। উপদেষ্টারা সুন্দর সুন্দর কথা বলেন কিন্তু কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা দুর্গত এলাকা সফরে যাওয়ায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু ফেনীবাসী ত্রাণ চায় না, অবিলম্বে বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা চায়। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ব্যাপারেও সরকারের পদক্ষেপ চাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের ঘোষণা না এলে ফেনীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছি।
জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন বলেন, মিথ্যা আশ্বাস আমরা শুনতে চাই না, আর যেন যখন-তখন বন্যায় না ডুবে, তার ব্যবস্থা চাই।
সভাপতির বক্তব্যে দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, পানি সম্পদ উপদেষ্টা ও তার মন্ত্রণালয় বন্যা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের নামে বিপুল অঙ্কের টাকার অপচয় এবং দায়িত্ব অবহেলার জন্য উপদেষ্টা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। অবিলম্বে স্থায়ী বন্যা প্রতিরক্ষা ও ক্ষতিপূরণের রোডম্যাপ না হলে আমরা অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনে যাব।
মানববন্ধনে উত্থাপিত ৭ দফা দাবি:
১. বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে উজানের পানি এসে ভাটি এলাকার বন্যার কারণ না হয়।
২. ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ এই অঞ্চলের মানুষের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের রক্ষাকবচ বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার অবিলম্বে পুননির্মাণ করতে হবে।
৩. এই এলাকার শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার উদ্ধার, পানি নিষ্কাশন লাইন তৈরি, নদী খনন ও যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. ২০২৪ সালের বন্যার পরে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত ১০০০ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প কোথায় কিভাবে খরচ হয়েছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। একইসাথে এবারের ও গতবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, ফসল, গবাদি পশু, মৎস্য খামারের সঠিক তথ্য যাচাই করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনতলা ভবন নির্মাণ করতে হবে, যাতে করে বন্যার সময় এগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৬. পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি ও অনিয়ম তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ইতোমধ্যে যেসব বাঁধ মেরামত হয়েছে, সেগুলোও ছয় মাস না যেতেই ফাটলের মুখে পড়েছে।
৭. ফেনীসহ এই অঞ্চলের মানুষ ভারতীয় পানি আগ্রাসনের শিকার। এর বিরুদ্ধে যথাযথ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
সংগঠনের নেতারা বলেন, দাবিগুলোর ব্যাপারে সরকার দ্রুত ঘোষণা না দিলে, রাজপথে কঠোর কর্মসূচি শুরু হবে, যা ঢাকাসহ ফেনী ও আশপাশের জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ী ও ছাগলনাইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. নিজামউদ্দিন, হাবের পরিচালক ও দাগনভুঁইয়া উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, ফেনী ফোরামের সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন ও অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন তালুকদার, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ নাজমুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিম উদ্দিন পাটওয়ারি, সিনিয়র সাংবাদিক শাহ্ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মনির উদ্দিন মনি, পরশুরাম ফোরামের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন পলাশ, ফেনী সদর অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন রুমেল, শ্রমিক দল নেতা আব্দুর রহিম, ফেনী এলিট ক্লাবের সভাপতি ফয়জুল্লাহ নোমানি, মনিপুর স্কুলের শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন, ফেনী সোসাইটি উত্তরার সহ সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক, সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা ইউসুফ আলী এবং কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিবিএ নেতা নাসিরউদ্দিন প্রমুখ।
এনডি/এমজে