ঢাকা, বুধবার, ৫ ভাদ্র ১৪৩২, ২০ আগস্ট ২০২৫, ২৫ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

এক ঘণ্টায় ডাম্পিংয়ে ২০ অটোরিকশা

জি এম মুজিবুর, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৪, আগস্ট ২০, ২০২৫
এক ঘণ্টায় ডাম্পিংয়ে ২০ অটোরিকশা অটোরিকশা আটক করে নেওয়া হচ্ছে ডাম্পিংয়ে।

ঢাকা: সকাল থেকেই রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর জমজমাট। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এ পথে চলাচল করেন কর্মস্থলের উদ্দেশে, ফলে এলাকা জুড়ে লেগে থাকে প্রচণ্ড ভিড় আর যানবাহনের চাপ।

যানজট এখানে যেন নিত্যদিনের চেনা চিত্র। এ ভোগান্তির অন্যতম কারণ অটোরিকশার উল্টো পথে চলাচল, যা শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে না, বরং দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তোলে। অনেক সময় রিকশাচালকদের অসৌজন্যমূলক আচরণ যাত্রীদের জন্য বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। তাছাড়া, যত্রতত্র রিকশা ও বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ করে দেওয়ায় রাস্তায় সৃষ্টি হয় অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধকতা, যা যানজটকে আরও প্রকট করে তোলে।

বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকেই মিরপুর ১০ নম্বরের পল্লবী জোনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের (টিআই) নেতৃত্বে সার্জেন্ট ও অন্যান্য ট্রাফিক সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেন। মূলত উল্টো পথে চলা রিকশা ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে উল্টো দিক থেকে আসা অটোরিকশা থামিয়ে প্রয়োজনে আটক করা হচ্ছে এবং নিয়ম ভঙ্গকারী যানবাহন ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে। অভিযানের প্রথম ঘণ্টায় অন্তত ২০টি অটোরিকশা ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে।

অভিযান চলাকালে ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট বলেন, আমরা বারবার রিকশাচালকদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা উল্টো পথে এসে যানজট তৈরি করছেন। এতে শুধু গাড়ির চাপই বাড়ে না, পথচারীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই আজ থেকে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হয়েছি।

অভিযানের সময় অনেক যাত্রীকে রিকশা থেকে গোলচত্বরের আগেই নামতে দেখা যায়। এতে কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশ করলেও অধিকাংশ মানুষ পুলিশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

অফিসগামী মো. হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, রিকশাচালকরা উল্টো পথে এসে আমাদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দেন। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যায় না, রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না, আমরা আসলে যাব কোথায়? পুলিশ যদি নিয়মিত এমন অভিযান চালায়, তাহলে রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

অন্যদিকে, রিকশাচালক মো. আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কিছু কিছু যাত্রী তাড়াহুড়ো করে উল্টো পথে যেতে চাপ দেন। মাঝে মধ্যে একটু আসতে হয়, সবসময় উল্টো পথে আসি না। সকালে উল্টো পথে আসায় ট্রাফিক আমাকে ধরছেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার রিকশা ডাম্পিংয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।  

তবে ট্রাফিক কর্মকর্তাদের মতে, যাত্রী চাপ দিলেও নিয়ম ভাঙার দায় রিকশাচালকেরই।

মিরপুর ১০ নম্বরে অভিযানের ফলে সকাল থেকেই এলাকাটিতে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহনগুলো সড়কে চলাচল করছে।

পল্লবী জোনের ট্রাফিক বিভাগের টিআই মো. আকতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমাদের প্রতিনিয়ত অভিযান। এভাবেই প্রতিদিন করে থাকি। তবে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ২০টি অটোরিকশা আটক করে ডাম্পিংয়ে পাঠিয়েছি। কারণ এ রিকশাগুলো কোনো নিয়ম-কানুন মানতে চায় না, যেখান থেকে মন চায় গাড়ি ঘোরাবে, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা এবং উল্টো পথে চলার কারণে এ গাড়িগুলোকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে। আমিসহ তিনজন সার্জেন্ট ও ছয়জন ট্রাফিকসহ আরও ১২ জন ট্রাফিক সহায়তাকারীকে (ট্যাগ) সঙ্গে নিয়ে আমাদের এ অভিযান সকাল ও বিকেলে পরিচালনা করি।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ট্রাফিক সহায়তাকারী (ট্যাগ) রাকসেল রহমান (ট্যাগ নম্বর ৪৪৭)  বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মিরপুর ১০ নম্বর আছি ১৪ জন। আমরা পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকি। ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ আমাদের যেভাবে ডিউটি করতে বলেন, সেভাবে আমরা ডিউটি করি, আমাদের দুই শিফট ডিউটি করতে হয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা আর বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।

তিনি বলেন, রাস্তায় এখন যানজটের মূল কারণ হচ্ছে অটোরিকশা, যেখানে সেখানে পার্কিং করা নিয়মকানুন না মেনে চলার কারণেই রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, অনেক সময় আবার ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে ডিউটি করে যাচ্ছি। যাতে করে সাধারণ মানুষের চলাচলে কোনো প্রকার বাধা সৃষ্টি না হয়।

তিনি আরও বলেন, এ অভিযান চলমান থাকবে, এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে।

জিএমএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।