ঢাকা, সোমবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

ফুলেল শ্রদ্ধায় বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৪, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫
ফুলেল শ্রদ্ধায় বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায় ফুলেল শ্রদ্ধায় বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায়

প্রবীণ বামপন্থী রাজনীতিক, লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা।

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বদরুদ্দীন উমরকে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। শুরুতেই বদরুদ্দীন উমরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিপ্লবী গান গেয়ে শোনান কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক গিল্টের সদস্যরা। পরে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তার সহযোদ্ধারা।

বদরুদ্দীন উমরকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিশু ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার), সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, রাষ্ট্র চিন্তক, কবি ও লেখক ফরহাদ মজহার, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় দলটি।

এ ছাড়া জাতীয় কবিতা পরিষদ, উদীচী, সমাজ চিন্তা ফোরাম, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি), বাসদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), জাসদ, অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নাগরিক ঐক্য, ভাসানী পরিষদ, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, জাতীয় গণফ্রন্ট, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য, ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, কর্মজীবী নারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাসদ মার্কসবাদী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমী, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এই চিন্তকের চির প্রস্থানে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বদরুদ্দীন উমর মুক্তকণ্ঠ, স্বাধীন লেখনী, স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অগ্রনায়ক ছিলেন। উনি সারাজীবন জুলুম, বৈষম্য, অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সব ন্যায়সংগত সংগ্রামের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যারা অগ্রনায়ক ছিলেন, তাদের অনেকে ওনার চিন্তা-চেতনার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন বলে আমি বিশ্বাস করি। উনি সারাজীবন বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক থাকবেন।

এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, বদরুদ্দীন উমর একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সমাজচিন্তক ছিলেন। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা উভয়ের শাসন আমলকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে অবস্থান করেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান যখন আন্দোলনের পর্যায়ে ছিল, তখনই তিনি এটাকে গণঅভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থান যে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকতম গণআন্দোলন, গণবিস্ফোরণ- এটা বদরুদ্দীন উমর সে সময় বলেছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার যে লড়াই, তার যে চিন্তা সেটা অবশ্যই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, বাংলাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। তিনি মুজিববাদী সংবিধানের বিরোধিতা করেছেন। তার চলে যাওয়ায় আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের পরে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন যে বুদ্ধিজীবী তার নাম বদরুদ্দীন উমর। তাকে আমাদের মূল প্রতিষ্ঠানগুলো সাইড করতে চেয়েছে। কিন্তু ইতিহাস তার জায়গায় তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর পেছনে মূল কারণ, তিনি তার লেখায় ইতিহাস কল্পনার আশ্রয় নেননি, উনি কোনো হেজিমনিকে খুশি করতে চাননি। উনি যেটা সত্য সেটাকে বলবার চেষ্টা করেছেন। আমাদের নতুন বাংলাদেশের নতুন পথযাত্রায় তার লেখা আমাদের পথনির্দেশনা দেবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করেছেন বদরুদ্দীন উমর। ছোট সংগঠন নিয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য কথা বলে গেছেন। আমরা যারা বাম সংগঠন করছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা বলছি বেশি। কিন্তু তিনি বলার পাশাপাশি লিখেছেন। তরুণ প্রজন্ম তার জীবন দর্শন ও লেখা ধারণ করতে পারলে বদরুদ্দীন উমরের চাওয়া সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।  

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বদরুদ্দীন উমর অনেক দিক থেকে অসাধারণ ছিলেন। তিনি কখনো আপস করেননি। তার রাজনৈতিক জীবনে যারা উগ্রবাদী ছিলেন, তাদের সঙ্গেও তিনি আপস করেননি। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ উপস্থাপন করেছেন। এসব না করলে তা অজানাই থেকে যেত। তার অর্থের প্রয়োজন ছিল, তিনি কখনো কোথাও থেকে উপহার গ্রহণ করেননি। তিনি আমাদের মাঝেই থাকবেন। তিনি সংগ্রামে বিশ্বাসী ছিলেন। জীবনের শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তার কাজের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বদরুদ্দীন উমর সারা জীবনের নানা জনে নানাভাবে বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। লালসার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছেন। জনগণের মধ্যে যারা স্বপ্ন দেখেন তারা বদরুদ্দীন উমরের জীবনী ধারণ করেন।  

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, বদরুদ্দীন উমর বুদ্ধিজীবী হিসেবে সব সময় ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, শোষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শোষিতের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

এসসি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।