ঢাকা, বুধবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

এক্সপ্লেইনার: বুয়েটের ঘটনায় সামনে আসা স্যোশাল প্ল্যাটফর্ম রেডিট বাংলাদেশে কেন অপরিচিত?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২১, অক্টোবর ২২, ২০২৫
এক্সপ্লেইনার: বুয়েটের ঘটনায় সামনে আসা স্যোশাল প্ল্যাটফর্ম রেডিট বাংলাদেশে কেন অপরিচিত?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শিক্ষার্থীর ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ঘিরে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। কয়েকশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে একজোট হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

জানা যায়, শ্রীশান্ত রায় নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসান উল্লাহ হলের এক শিক্ষার্থী নারীদের কটূক্তি করেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণেরও অভিযোগ ওঠে। তাই তার শাস্তি চেয়ে রাতে আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।  

শ্রীশান্ত রায় যে স্যোশাল প্ল্যাটফর্মে ‘নারীদের কটূক্তি করেন’ সেটি বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত নয়। প্ল্যাটফর্মটির নাম ‘রেডিট’ এবং এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, থ্রেড, টিকটক এবং এক্সের চেয়ে অজনপ্রিয়।  

বুয়েটে গতকাল রাতে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের ঘটনায় পুলিশ শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করেছে। রেডিটে তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন বলেও জানা গেছে।  

রেডিট কি, কোথা থেকে এলো রেডিট?
সাধারণ এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের নেটিজেনদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টগ্রাম; এরপর টিকটক, থ্রেড ও এক্স। যে তুলনায় রেডিট প্ল্যাটফর্ম কেউ ব্যবহারই করে না। কিন্তু এই রেডিটের আবিষ্কার হয়েছিল ফেসবুকের সময়কালেই।

ফেসবুক ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মার্ক জুকারবার্গ ও তার কয়েকজন সহপাঠী মিলে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি তৈরি করেন। রেডিটের জন্ম ২০০৫ সালে। এটি প্রতিষ্ঠা করেন স্টিভ হাফম্যান, অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান এবং অ্যারন সোয়ার্টজ। কিন্তু ফেসবুক খুব দ্রুত নেটিজেনদের কাছে পৌঁছে যায়।

ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেছে, ২০০৫ সালের জুন মাসে মাত্র এক লাখ মার্কিন ডলার মূলধন নিয়ে রেডিট নিয়ে যাত্রা শুরু করেন স্টিভ, অ্যালেক্সিস ও অ্যারন। ওয়েবসাইটটির বর্তমান বাজারমূল্য এখন ৩ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থ কনভার্ট করলে দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা।

কীভাবে কাজ করে রেডিট
রেডিট মূলত একটি অনলাইন কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলাদা আলাদা ‘সাবরেডিট’ তৈরি করে আলোচনা করেন। এসব সাবরেডিটে ছবি, ভিডিও, লিংক, কিংবা টেক্সট পোস্ট করা যায়। প্রতিটি কমিউনিটির আলাদা মডারেটর থাকেন, যারা নিয়মনীতি মেনে আলোচনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেন।

ফেসবুকের পোস্ট, স্ট্যাটাস, ফটো, ভিডিওতে যেমন ‘লাইক’ দেওয়ার সুযোগ আছে, রেডিটে রয়েছে ‘আপভোট’ ও ‘ডাউনভোট’ ব্যবস্থা। কোনো পোস্ট ভালো লাগলে আপভোট, না লাগলে ডাউনভোট দেওয়া যায়।

রেডিট মূলত টেক্সটভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম; তবে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা যায়। ব্যবহারকারীরা চাইলে ছদ্মনামে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। প্ল্যাটফর্মটিতে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা উন্মুক্ত। ব্যবহারকারীরাও খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেওয়া বা মতামত প্রকাশ করেন এই মাধ্যমে।  

তরুণদের প্ল্যাটফর্ম
বাংলাদেশে না হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার তরুণদের কাছে রেডিট বেশ জনপ্রিয়। কেননা, এখানে তারা যৌনতা নিয়ে আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ব্যাকলিংক নামের একটি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, রেডিটের দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ১১ কোটি।

২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেই রেডিটের রাজস্ব আয় হয়েছে ৮৯ কোটি ডলার, যা প্রায় ১০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার সমান।

রেডিটের জনপ্রিয়তা বাড়ে যখন তারা চালু করে ‘আস্ক মি অ্যানিথিং’ সেশন, যেখানে যে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, আর জনপ্রিয় ব্যক্তি বা বিশেষজ্ঞরা সরাসরি উত্তর দেন। বিশ্বের তরুণ সমাজে এটি আইডিয়া বিনিময়, বিতর্ক ও শেখার এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে রেডিটের অবস্থা
বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান সিমিলিয়ারওয়েবের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হলো ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, বিগো এবং থ্রেডস। শীর্ষ পঞ্চাশের তালিকায় রেডিট নেই। মজার তথ্য হলো, বাংলাদেশে রেডিট এক সময় বন্ধ ছিল। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পর্নোগ্রাফি ও জুয়ার অভিযোগে রেডিটসহ কয়েকটি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ‘রেডিটে পর্নো কনটেন্ট রয়েছে’ এমন অভিযোগে প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও রেডিট বন্ধের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন। এখন অবশ্য রেডিট চালু আছে। কিন্তু ব্যবহারকারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।

এনডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।