ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দেড় দশকের দীর্ঘ শাসন-শোষণের। তীব্র জনরোষের মুখে সেদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে।
তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন নাকি রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে আছেন, তা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। তবে কোনো সেনানিবাস বা আধা সামরিক বাহিনীর কোনো বাংলোর মধ্যে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আছেন বলে ধারণা করা যায়।
ভারতে আশ্রয়ে থেকেই শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। যা দেশে ক্ষোভ উসকে দিচ্ছে। দিল্লির কাছে এ বিষয়ে ঢাকার আপত্তি প্রকাশ সত্ত্বেও হাসিনা ভাষণ দিয়েই চলেছেন। এর জেরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ হাসিনার পৈতৃক বাড়ি পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতে কী চিন্তাভাবনা চলছে, তা নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে দেওয়া হলেও আসলে তাকে আবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনে বসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বা ইচ্ছে ভারতের নেই।
পতনের দিন ভারতে হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয়-সাত মাস আগে শেখ হাসিনা যখন হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন, তখন ভারতের ধারণা ছিল, তার এই স্টপওভার (যাত্রাবিরতি) বড় জোর ছয়-সাত ঘণ্টার জন্য। সেই ভুল ভাঙতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। তাকে পাঠানো সম্ভব হয়নি তৃতীয় কোনো দেশে। আজও রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।
হাসিনার বিষয়ে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, হাসিনার ভবিষ্যৎ আমি বলতে পারি না। তিনি নিশ্চয়ই কোথাও যাচ্ছেন না। অন্য জায়গায় হয়তো অতটা সুবিধা করতে পারছেন না বা যেটাই হোক। ভারতে আছেন, ঠিক আছে, ভারত সরকার তাকে...তিনি থাকবেন, আগেও থেকেছেন। (শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর) ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত এখানেই ছিলেন।
সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, আমাদের এমন কোনো পলিসি (নীতি) নেই; কোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য যে তাকে জোর করে ফেরত দেওয়া। (তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা) দালাইলামাও তো এখনো ভারতেই আছেন। আমাদের এখানে যারা আশ্রয় নিয়ে আসেন, তাদের ক্ষেত্রে আমাদের সাংস্কৃতিক বা নীতিগত বিষয় আছে, তাদের আমরা জোরজবরদস্তি করে কোথাও পাঠাবো না।
ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ভারত তাকে রাখবে, উনি যতদিন থাকতে চান, যতদিন না উনি ওখানে (বাংলাদেশে) ফেরত গেলে সেফ (নিরাপদ) হবেন, সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভারত তাকে রাখবে। তবে (রাজনীতিতে) রিহ্যাবিলিশনের (পুনর্বাসন) যে আলাপ হচ্ছে, জানি না ভারত সরকার কী ভাবছে, আওয়ামী লীগের তো সেরকম একটা চেষ্টা আছে, আমার মনে হয় না এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো পরিস্থিতি আছে।
শেখ হাসিনার ওপর বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ সহজে যাবে না উল্লেখ করে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ৩২ নম্বর ভাঙার পর আওয়ামী লীগ একটা সহানুভূতি পেয়েছে, অকারণে যে আরও কিছু ভাঙচুর হয়েছে...। শেখ হাসিনার ওপর যে রাগ-বিতৃষ্ণা, মনে হয় না তারা (দেশের মানুষ) এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে। আওয়ামী লীগ একটা ঐতিহাসিক দল। তারা নিশ্চয় (রাজনৈতিক অঙ্গনে) একটা নির্দিষ্ট জায়গা নিয়ে আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে যে সবাই আর কখনো মেনে নেবে, সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।
ভারতে হাসিনাকে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে দেওয়ার বিষয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, একটা জিনিস পরিষ্কার, দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাকে হয়তো ভাষণ দিতে দেওয়া হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে ভারত শেখ হাসিনাকে আবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক চালচিত্রে হাতে করে বসিয়ে দিতে চাইবে। বাস্তবতা হলো, ভারতের সেই ইচ্ছেও নেই, হয়তো ক্ষমতাও নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৫
এইচএ/