ঢাকা: ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্রমাগতভাবে মানুষের অধিকারগুলো সংকুচিত করেছে।
গণতন্ত্রে যে বিরোধী দলের বিশেষ একটি জায়গা আছে, সেটিকে তারা কখনই বিশ্বাস করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রে স্বীকৃত বিরোধীদলের সব কর্মকাণ্ডকে বানচাল করতে তারা দমননীতি অবলম্বন করেছে। তাদের দমননীতি অমানবিক, মধ্যযুগীয় এবং নাজি ফ্যাসিস্টদের সমতুল্য।
শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ২০ দলীয় জোটের পক্ষে এক বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, শুধুমাত্র কথা বলা, সভা, সমাবেশের অধিকারগুলোই তারা (আওয়ামী লীগ) হরণ করেনি বরং নাজিদের কায়দায় বিরোধীদলের নেতাদের অবরুদ্ধ, কারারুদ্ধ, মিথ্যা মামলাতে জড়ানো ছাড়াও অনেককে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সমাজের নানাস্তরের মানুষসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গুম, গুপ্তহত্যা ও ক্রসফায়ারের নির্মম শিকার হতে হয়েছে। ফলে, এই পৈশাচিক দুঃশাসনকে মোকাবেলা করার জন্য ২০ দলীয় জোট গঠন হওয়ার পর থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের হারানো অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, ২০ দলীয় জোটের অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকার অবৈধ একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করে আরো বেশি নির্দয় ও নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, বাক, ব্যক্তি ও সমাবেশের অধিকার আদায়, সবখানে নিরাপত্তাহীনতা থেকে দেশের মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূরীভূত করতে গণমানুষের অবরোধ কর্মসূচির ওপর সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর কাপুরুষোচিত বর্বর হামলার নিদর্শনগুলো দেখলে মনে হয়, সরকার মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
২০ জোটের পক্ষে রিজভী বলেন, ২০ দলীয় জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ১৪ দিন ধরে নিজ কার্যালয়ের ভেতর অবরুদ্ধ রেখে কার্যালয়ের চারদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ইট, বালু, কাঠের ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড করে রাখা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতা এবং দেশব্যাপী শত সহস্য নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রাখা, হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, এজেন্টদের দিয়ে যানবাহনে আগুন লাগিয়ে পরিকল্পিত নাশকতা করে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপানো, প্রকাশ্যে বুকে গুলি করার নির্দেশ ইত্যাদি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এখন এ দেশে বিরাজমান।
বিরোধীদলের আন্দোলনে দমনে সরকার নির্মম আচরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর এই নিষ্ঠুর কর্মযজ্ঞে নামানো হয়েছে দলীয় চেতনায় উজ্জীবিত বেশকিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের। আর এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, বেসামাল দলীয় ক্যাডারদের।
উদাহরণ দিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে যৌথবাহিনী আওয়ামী প্রতিহিংসার চেতনা নিয়ে ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে আগুন দিয়ে ছারখার করে দিয়েছে।
একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ৩ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ করার পর থেকে সারাদেশে চালানো হচ্ছে হিংস্র তাণ্ডব, রক্ত ঝরানো হচ্ছে বিভিন্ন জনপদে।
দেশের সরকারের দুঃশাসন চরম আকার ধারণ করেছে জানিয়ে বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের প্রখ্যাত কুটনীতিক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রিয়াজ রহমানও এই দুঃশাসনের ছোবল থেকে রেহাই পাননি। ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট দুষ্কৃতিকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।
বিরোধীদলের আন্দোলন দমনে সরকার আরো কঠোর হবে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যৌথবাহিনীর পাশাপাশি এখন নাকি সেনাবাহিনীও নামবে।
২০ দলীয় জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, এই অবৈধ সরকারের অগ্রহণযোগ্য ও নিষ্ঠুর দুর্ব্যবহারের কবলে গোটা জাতি আজ অপমাণিত। বৃহস্পতিবার বিজিবি মহাপরিচালক এবং শুক্রবার মহাপুলিশ পরিদর্শকের বক্তব্য জাতিকে স্তম্ভিত ও হতবাক করেছে।
ঔদ্ধতপূর্ণ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত এই বক্তব্য জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে বলে রিজভী অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিজিবির মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ২০ দলীয় জোটের সব পর্যায়ের আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিও জানানো হয়।
বিবৃতিতে এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে চলমান অবরোধ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর গুলিতে এবং সরকারের নিষ্ঠুর আক্রমণে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করা হয়।
বিবৃতিতে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান, রুহুল কবির রিজভী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫