ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই, রওশনকে এরশাদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই, রওশনকে এরশাদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ

ঢাকা: জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ ও মহাসচিব পদে পরিবর্তনের বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

এরশাদ বলেছেন, গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেবেচনার কোনো সুযোগ নেই।

রোববার (২৪ জানুয়ারি) লিখিত এক বিবৃতিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ কথা বলেন। পার্টিতে কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ ও মহাসচিব পরিবর্তনের পর ২১ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার আহ্বান জানান রওশন। ওই বিষয়ে দেওয়া বিবৃতিতে রওশন পার্টিতে এই পদায়ন ও রদবদলকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলেও মন্তব্য করেন।

জবাবে এরশাদ তার বিবৃতিতে বলেন, গঠনতান্ত্রিকভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় পার্টিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

পার্টি আগামীতে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে বলেও রওশনকে আশ্বস্ত করেছেনতিনি।

বিষয়টি রওশন এরশাদকে চিঠি মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও এরশাদের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে রওশন এরশাদকে ‘সহকর্মী’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
 
রওশনকে লেখা এরশাদের চিঠি
প্রিয় সহকর্মী-
আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন।
“২৩ জানুয়ারি শনিবার মিডিয়ায় প্রেরিত আপনার একটি বিবৃতির প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সেখানে আপনি দু’টি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন। প্রথমত, সম্প্রতি পার্টিতে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান এবং মহাসচিব পদে রদবদলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, বিগত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু যে, আপনাকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন- তা আপনি নাকচ করেছেন।
 
দ্বিতীয় বিষয়ের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। প্রথম প্রসঙ্গের বিষয়টি আপনাকে স্পষ্ট করতে চাই। জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে আপনারও সম্মতি ছিল।
 
কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির কোনো গঠনতান্ত্রিক পদ নয়। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের প্রয়োজনে আমি কোনো পদ সৃষ্টি বা কাউকে কোনো বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করতে পারি। আমি গঠনতন্ত্রের বহির্ভূত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে যা রয়েছে- সেটাই আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্র। ৩৯ ধারাটি তারই অংশ। এই ধারাটি আমার সৃষ্টি করা নয়। গঠনতন্ত্র আমি নিজে প্রণয়ন করিনি। এটি একটি কমিটি দ্বারা প্রণীত এবং পার্টির জাতীয় কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদিত। ৩৯ ধারা যদি সংশোধন বা বাতিল করতে হয় তা শুধু পরবর্তী কাউন্সিলেই হতে পারে। তার আগে গঠনতন্ত্রের কোনো ধারা নিয়ে বিতর্ক  সৃষ্টি করা হবে- গঠনতন্ত্রের অবমাননা, পার্টি শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং দলীয় গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা।
 
মহাসচিব পদে রদবদল প্রসঙ্গে আপনাকে অবগত করতে চাই যে, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছি। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মিডিয়ার কাছে আপনাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এটা ছিল দলকে বিভক্ত করার একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। সে কারণে, বাবলুকে যে ধারামতে মহাসচিব করা হয়েছিল- সেই ৩৯ ধারাতেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আপনার নিশ্চয় জানা আছে যে, জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পরবর্তীতে যে ক’জন মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেছেন- তারা প্রথমে এই ধারা মতেই নিয়োগ লাভ করেছেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমে এই ধারার বিষয়বস্তু ৪৬ ধারার অন্তর্গত ছিল। সর্বশেষ কাউন্সিলে সংশোধনীর মাধ্যমে এটি ৩৯ ধারায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যে, দু/একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এখন ৩৯ ধারা নিয়ে বিতর্ক করছেন তারাও কিন্তু এই ৩৯ ধারা মোতাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। বলা প্রয়োজন যে, অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং প্রথম মহাসচিব বাদে সকল- মহাসচিবই কোনো না কোনো সময়ে এই ধারা বলে দায়িত্ব লাভ করেছেন। তখন কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসেনি।
 
আপনি আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে অবগত আছেন যে, সংসদীয় কমিটি দলীয় নীতি-নির্ধারণের কোনো শাখা নয়। একমাত্র প্রেসিডিয়ামেরই পার্টির নীতি-নির্ধারণের এবং কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা অনুমোদনের এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম বাদে অন্য কোনো শাখার মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই।
 
আপনি পার্টির একজন শীর্ষ নেতা এবং সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে কোনো বিষয়ে আবেদন, নিবেদন কিংবা বিবেচনার আহ্বান জানাতেই পারেন। সেটা আপনার সাংগঠনিক অধিকার। তবে পার্টির স্বার্থে বিবৃতিতে উল্লিখিত আপনার প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি আপনিও পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন।
 
আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, পার্টির মধ্যে কোনো বিভেদ বা অনৈক্য থাকবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পার্টিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবো। আপনি সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন, আমি পার্টির নেতৃত্বে আছি। আমাদের উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি আগামী দিনে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ”

গত ১৭ জানুয়ারি রংপুর এক কর্মীসভায় ছোট ভাই জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং ভবিষ্যত নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ। একইসঙ্গে কাউন্সিলের জন্য জিএম কাদেরকে আহ্বায়ক ও সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করেন।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিনিয়র নেতারা। পরদিন ১৮ জানুয়ারি বিকেলে প্রেসিডিয়াম ও পার্লামেন্টারি কমিটির বিশেষ বৈঠকে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। তৃতীয় দিন ১৯ জানুয়ারি দুপুরে রংপুর থেকে ফিরে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে সরিয়ে দিয়ে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নিযুক্ত করেন এরশাদ।

** এরশাদকে সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার আহ্বান রওশনের

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫
এসআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।