ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

রওশন জাপাকে হেয় করেছেন মন্তব্য এরশাদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
রওশন জাপাকে হেয় করেছেন মন্তব্য এরশাদের

ঢাকা: রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য রেখেছেন- এই ফোরামে এটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। তিনি পার্টিকে কারো “একক সম্পতি বা কোনো কোম্পানি নয়”- বলে সংগঠনকে হেয় করেছেন।


 
রোববার (২৪ এপ্রিল) এরশাদকে গণতন্ত্রের সবক দেওয়ার একদিন পর এক প্রতিক্রিয়ায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমন মন্তব্য করেন।
 
এরশাদ তার বিবৃতিতে বলেছেন, বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় এবং জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির অগণিত নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে- তার অবসানের লক্ষ্যে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি।
 
প্রথমেই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতাকে মনে রাখতে হবে যে, সংসদীয় দল পার্টির একটি শাখা মাত্র। এই শাখার দায়িত্ব-পার্টির নীতিমালা অনুসারে শুধুমাত্র সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনার ফোরাম হচ্ছে পার্টির প্রেসিডিয়াম।
 
সুতরাং রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য রেখেছেন- এই ফোরামে এটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। তিনি পার্টিকে কারো “একক সম্পতি বা কোনো কোম্পানি নয়”- বলে সংগঠনকে হেয় করেছেন।
 
জাতীয় পার্টি একটি গঠনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই গঠনতন্ত্র কোনো বিশেষ ব্যক্তির আরোপিত বিষয় নয়। এটি জাতীয় পার্টির গণতন্ত্রের দলিল- যা পার্টির প্রতিষ্ঠাকালে জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এই গঠনতন্ত্রের একটি শব্দও পরিবর্তন করতে হলে জাতীয় কাউন্সিল থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এটাই হচ্ছে দলীয় গণতন্ত্রের ধারা।
 
রওশন এরশাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ৩৯ ধারা গণতান্ত্রিক নয়। এই ধারা পরিবর্তন করতে হবে। জবাবে এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমার সৃষ্টি করা নয়। এটা জাতীয় কাউন্সিলে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি ধারা। এই ধারা সম্পর্কে পার্টির কারো কোনো আপত্তি থাকলে তা শুধুমাত্র জাতীয় কাউন্সিলে উত্থাপন করা যেতে পারে। কাউন্সিল ভোটের মাধ্যমে এই ধারা বাতিল বা  বহাল রাখার রায় দিতে পারে। তার আগে, যা গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- সেটাকে ‘অগণতান্ত্রিক’ ধারা বলাটাই দলীয় গণতন্ত্রকে অবমাননা করা।
 
এই ধারাবলে রওশন এরশাদকেও দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই ধারাবলে যারা ১৫/১৬ বছর দলের বাইরে ছিলেন তাদেরও দলে ফিরিয়ে এনে প্রেসিডিয়াম পদ দেওয়া হয়েছে। পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়ামের অন্ততঃ ৩৫ জন সদস্যই ৩৯ ধারা বলে প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। ৩৯ ধারা যখন কারো পক্ষে যায়- তখন এটা অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী ধারা হয়ে যায়, আর যখন ব্যক্তি স্বার্থের বিপক্ষে যায় তখন এটা ‘অগণতান্ত্রিক’ হয়ে পড়ে- এই মানসিকতা থাকা উচিত নয়। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকরা তা গ্রহণ করবে না।
 
কাউন্সিল পেছানোর দাবি করেছিলেন রওশন এরশাদ। এ প্রসঙ্গে এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। নির্বাচন কমিশন থেকে দুই বার সময় নেওয়ার পর এবং তারপর সকলের মতামতের ভিত্তিতে দুইবার তারিখ পরিবর্তনের পর প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
সেই অনুযায়ী ভেন্যু ভাড়া করা হয়েছে, প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে, ঢাকায় বিদেশি মিশনসমূহে পত্র দিয়ে দাওয়াতও দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।
 
এরশাদ তার বিবৃতিতে বলেছেন, এটা ঠিক যে, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভালো ফল করতে পারেনি। তার পেছনে অন্যসব কারণের পাশাপাশি গত ২ বছরে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার দুর্বলতাও দায়ী ছিল।
 
রওশন এরশাদ বিভিন্ন দলে চলে যাওয়া কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেছেন, “পার্টির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তাদের হারিয়েছি”। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, যে নেতারা দল ছেড়ে চলে গেছেন, তারা প্রত্যেকেই বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মতো দল থেকে জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন। ওইসব দলের ভুলের কারণেই কি তারা দল ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন?
 
 জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল এবং তারা যখন উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী, বা মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন তখন মনে হয় দলের কোনো ভুল ছিল না। যখন ক্ষমতায় ছিলাম না তখনই যেন পার্টির ভুল হয়ে গেল! আর তারা সুবিধার লোভে অন্য দলে চলে গেলেন। এসব সুবিধাভোগী নেতাদের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী, সমর্থকরা কীভাবে গ্রহণ করবেন?
 
রওশন এরশাদ কোন গণতন্ত্র অনুসারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানালেন তা স্পষ্ট করে বলুন? দল ভাগ করা কিংবা উপদল সৃষ্টি করা কি দলীয় গণতন্ত্রের আওতায় পড়ে? তাকে বলতে হবে এ পর্যন্ত কোনটা দলীয় গঠনতন্ত্রের বাইরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে?
 
পরিশেষে, আমি সকল ধরণের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবসান ঘটিয়ে সকলের অবগতির জন্য সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, জাতীয় পার্টি সম্পূর্ণভাবে একটি গণতন্ত্র চর্চার রাজনৈতিক দল। এই দলে গঠনতন্ত্রের বাইরে কখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি- আর হবেও না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলাসমূহের সম্মেলন সমাপ্ত করে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
 
আগামী ১৪ মে ২০১৬ শনিবার, রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। নির্দিষ্ট তারিখে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
এসআই/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।