রাজশাহী: গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক টুকু নিহত হওয়ার ঘটনায় নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পাঁচজনকে আসামি করে সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন টুকুর স্ত্রী শামসুন নাহার লতা।
আসামিরা হলেন, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নয়ন (৪৫), রাজশাহী মহানগরীর বোসপাড়া এলাকার সালাউদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৪৮), মহিষবাথান এলাকার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম (৪৬) ও সুলতানাবাদের কাপড় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন (৪৮) এবং অজ্ঞাত আরও একজন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন বলেন, আসামিদের মধ্যে অজ্ঞাত একজনসহ তিনজন পলাতক। আর রবিউল ও জসিমকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সময় তারা পাঁচজন সেখানে ছিলেন।
আটক দুইজনের বরাত দিয়ে শামসুদ্দিন বলেন, রবিউল ও জসিম আগে থেকেই টুকুর চেম্বারে বসা ছিলেন। পরে একই মাইক্রোবাসে তার চেম্বারে আসেন নয়ন, তরিকুল ও এক অজ্ঞাত ব্যক্তি।
মাইক্রোবাস থেকে নয়ন ও তরিকুল নেমে টুকুর চেম্বারে গেলেও অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামেননি। তবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই মাইক্রোবাসে টুকুকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে তিনজন পালিয়ে যান। তারাই প্রচার করেন টুকু তার নিজের পিস্তল পরিস্কার করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তাকে পেছন থেকে গুলি করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নয়নকে আটকের পর জানা যাবে সেখানে কী হয়েছে।
এদিকে, টুকুকে গুলিটি পেছন থেকেই করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. এনামুল হক। তিনি জানান, টুকুর পিঠের দিকে যে ফুটো আছে তা তুলনামূলক ছোট। এছাড়াও বুকের হাড়ের ভেতরের অংশে গুলির জখম পাওয়া গেছে। এ থেকে বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট যে, টুকুকে পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। গুলি হাড়ের ভেতরের অংশ জখম করে অল্প উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এছাড়াও গুলিতে ফুসফুসের নিচের অংশও জখম হয়।
তিনি বলেন, টুকুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। রোববার (২৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়।
অন্যদিকে, সোমবার সকাল ১০টায় টুকুর নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে এ জানাজায় সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। পরে দুুপুরে মহানগরীর হেতম খাঁ গোরস্তানে তার মরদেহ দাফন করা।
রোববার বিকেলে জিয়াউল হক টুকু রাজশাহী নগর ভবনের সামনে নিজের ব্যবসায়িক চেম্বারে গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রথমে নিজের পিস্তলের গুলিতে মারা যাওয়ার সংবাদ রটে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার বিষয়টি দাবি করা হয়। বলা হয়, নিজের নয়, পার্টনারের গুলিতেই মারা গেছেন টুকু।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
এসএস/এইচএ