সিরাজগঞ্জ: ৭২ এর সংবিধানের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনিসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সেই মুজিববাদী সংবিধান, সেই আওয়ামী লীগের সংবিধান, গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করেনি।
বাংলাদেশের সমাজ রাষ্ট্রকে বিভাজিত করেছে।
সোমবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের মুক্তির সোপান চত্বরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে এসেছিলাম, যে পরিবর্তন আমরা চেয়েছিলাম, সেই পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের যে চাওয়া ছিল, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ। সেটি নিয়েও টালবাহানা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে নতুন বন্দোবস্ত, নতুন দেশ গড়ার লড়াইয়ে যখন মাঠে নেমে এসেছিলাম সিরাজগঞ্জের মতো বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। সবাই রাস্তায় নেমে এসেছিল। বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতেও আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই যে গণহত্যা হয়েছে, আপনার সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, বাংলাদেশে আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে। সেই সব কিছুর বিচার ছাড়াই কি আমরা নির্বাচনের দিকে যাবো? আমাদের অবশ্যই বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারও লাগবে সংস্কারও লাগবে। আমরা পুরোনো সিস্টেমে যেতে চাই না। সংস্কার লাগবে, এমন সংস্কার যাতে বাংলাদেশে কেউ কখনো স্বৈরাচারী হতে না পারে।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা বলেছিলাম, একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়বো। তরুণদের নেতৃত্বে একটি বাংলাদেশ তৈরি করার স্বপ্ন দেখি এখনো। আপনারা যারা মুরুব্বিরা আছেন, মা বোনেরা আছেন তাদের কাছে দোয়া নিতে এসেছি। সমর্থন চাইতে এসেছি। জুলাই গণঅভুত্থানে শেখ হাসিনার জুলুম থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি দিতে আমরা কোনো আপস করিনি। জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ছিলাম। আপনাদের সন্তানেরা মাঠে ছিল পুলিশের বুলেটের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল। আপনারা-আমরা যারা জীবিত রয়েছি, আমাদের দায়িত্ব যারা শহীদ হয়েছে তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। তাদের প্রকৃত মর্যাদাটা দেওয়া।
ফ্যাসিবাদের সময় যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, সেই ভয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে এই গণঅভ্যুত্থান তৈরি হয়েছে। যারা অভ্যুত্থান করেছে, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তারা ভয় করে না, তারা পরোয়া করে না। সুতরাং যারা সেই ভয়ের সংস্কৃতি আবারও ফিরিয়ে আনতে চায় তারা খুব ভুল করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের পদযাত্রায় বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা স্পস্টভাবে বলতে চাই কোনো বাধা বাংলাদেশের জনগণ ও তরুণ প্রজন্ম মানবে না।
তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জের মাটি প্রতিরোধের ঘাঁটি। আমরা সেই প্রতিরোধ দেখেছি জুলাই গণঅভুত্থানের সময়। সিরাজগঞ্জে ১৩ জন শহীদ হয়েছে। সিরাজগঞ্জ থেকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের যে লড়াই শুরু, সেই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সিরাজগঞ্জ যেভাবে গণঅভ্যুত্থানে পথ দেখিয়েছিল, নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের লড়াইয়েও পথ দেখাবে। আগামী বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্য পৃথিবীর বুকে তুলে ধরবো। কর্মসংস্থান করা হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুব্যবস্থা করা হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে নাহিদ বলেন, আমরা বলছি না অন্ধভাবে আমাদের সমর্থন দেন। যাচাই করুন কারা আপনার পক্ষের কথা বলছে, কারা বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, কারা স্বৈরাচারী হাসিনাকে সরাইছে, কারা এখন হাসিনার জায়গায় বসতে চাইছে না বরং নতুন ব্যবস্থা তৈরি করতে চাচ্ছে, আপনারা সবকিছু বিবেচনা করে নতুন দলে অংশগ্রহণ করুন। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত সিরাজগঞ্জ তৈরি করুন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- এনসিপির মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারি, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার, যুগ্ম সদস্য সচিব সাঈদ মুস্তাফিজ প্রমুখ।
আরএ