ঢাকা, বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

সাংবাদিক শামছুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৪৬, জুলাই ১৬, ২০২৫
সাংবাদিক শামছুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

যশোর: সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৬ জুলাই)। ২০০০ সালের এই দিনে ঘাতকের তপ্ত বুলেট নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল প্রথিতযশা এই সাংবাদিককে।

তখন তিনি ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠ’র দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিনিধি।

দীর্ঘ ২৫ বছরেও বিচার হয়নি সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের খুনিদের। প্রতি বছর শহীদ এই সাংবাদিকের মৃত্যুবার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে তাই স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা বিচারের দাবিই উচ্চারিত করেন। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও একই দাবি উচ্চারিত হয়, আশায় বুক বেধে থাকেন বাদী ও নিহতের স্বজনেরা। কিন্তু, খুনিদের বিচার হয়না।  

এবারও সাংবাদিকদের নানা সংগঠনের উদ্যোগে তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ছিল শহীদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া, কালোব্যাজ ধারণ এবং স্মরণসভা।

শহীদ শামছুর রহমান কেবল ছিলেন সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের নেতা। আমৃত্যু তিনি এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে দেশে যখন সাংবাদিকেরা সুস্পষ্ট দুটি ধারায় বিভক্ত হয়েছিলেন তখন সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল অবস্থান নিয়েছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার পক্ষে। যারা তখন আওয়ামী-বাকশালী ধারার বিপক্ষে যেয়ে গড়ে তুলেছিলেন সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, শামছুর রহমান কেবল ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

শামছুর রহমান কেবলের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৫ মে যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী ডিহি ইউনিয়নের শালকোনা গ্রামে।  

ছাত্র জীবনে সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়লেও তিনি এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন ১৯৮০ সালে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঠিকানায়। ১৯৮২ সালে নওয়াপাড়া প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন দৈনিক বাংলায়। মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮৪ সালে তিনি দৈনিক বাংলার যশোর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে পদন্নতি লাভ করেন।

তিনি পরবর্তীকালে দৈনিক বাংলার স্টাফ রিপোর্টার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এবং ব্যুরো প্রধান হিসেবেও পদন্নতি পেয়েছিলেন। এখান থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেছিলেন ১৯৯৭ সালে। এছাড়া, বিচিত্রাসহ আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তার সংবাদ ও লেখা ছাপা হতো।  

শামছুর রহমান কেবল চরমপন্থার আদ্যপান্ত খুঁজে বের করে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তার কলম সবসময় পরিচালিত হয়েছে চোরাচালান, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ লেখনিতে। সাংবাদিক হিসেবে দেশ, সমাজ, মানুষ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশের সুরক্ষাকেই তিনি নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যজ্ঞান করেছেন। পুরো সাংবাদিকতা জীবনে সে কারণে তিনি এসবের প্রতি যে কোনো অন্যায্যকে তুলে ধরেছেন সংবাদপত্রের পাতায়। একটি মফস্বল শহরের গন্ডি পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন আন্তর্জাতিক মাণের সাংবাদিক। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি পত্রিকার পক্ষ থেকে সংবাদ কাভার করতে যেতেন।  

সাংবাদিকতার পাশাপাশি শামছুর রহমান কেবল ছিলেন একজন কবি ও লেখক। তার লেখা ‘রাজনীতির জ্যোতি বসু’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। সাংবাদিকতার চোখ দিয়ে দেখা চোরাচালানিদের জীবন জীবিকার বাস্তবতা নিয়ে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তার একমাত্র উপন্যাস ‘ধুসর সীমান্তে’। শিশুদের জন্য ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় শামছুর রহমান কেবলের গল্পগ্রন্থ ‘একজন বড় মানুষের গল্প’।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা না আসলে নিম্ন আদালতে এই মামলার কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করা যাবে না।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক। আরেক আসামি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন।  

শামছুর রহমান কেবলের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রেসক্লাব যশোরে সমবেত হয়ে শোকর‌্যালি নিয়ে কারবালায় শহীদের কবরে যায়। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রেসক্লাব যশোর, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, যশোর জেলা ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন।

পরে প্রেসক্লাব যশোরের উদ্যোগে শহীদ সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল এবং শেষে একই স্থানে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।