রাঙামাটি: একটানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গত তিনদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন রাঙামাটির সাতটি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় ওই সব এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
স্থানীয় প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের আশ্রয়ের জন্য ২৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
রাঙামাটি জেলা শহরের শান্তিনগর, রসূলপুর, ব্রাক্ষণটিলা, পৌর কলোনি, আসামবস্তি, ব্রাক্ষ্মণটিলা, পাবলিক হেলথ এলাকা হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাঘাইছড়ির উপজেলার রূপকারী ইউনিয়ন, মাস্টারপাড়া, মধ্যমপাড়া, হাজিপাড়া, মাদারাসাপাড়া, এফ ব্লক, বটতলী, আমতলী ইউনিয়নসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল হ্রদের পানিতে ডুবে গেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে সেনাবাহিনী সাজেকের বাঘাইহাট এলাকায় বন্যাদুর্গত অর্ধশতাধিক মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
লংগদু উপজেলার ঝরনা টিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগাচত্বর ইউনিয়নের জালিয়া পাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁও পাড়া, মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনি, বিলাইড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারছড়, বহলতলী, বাঙ্গালকাটা এলাকাসহ নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, জুড়াছড়ি উপজেলা, কাপ্তাই উপজেলা এবং নানিয়ারচর উপজেলার নিম্নাঞ্চল হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাঙামাটি সদর, নানিয়ারচর, লংগদু এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন এবং রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ি পৌরসভা মিলে মোট ৮১টি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। লংগদু এবং বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং দুই হাজার কেজি চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তায় ২৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাঙামাটি, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু উপজেলা বন্যায় ৯৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ৪৩টি পুকুর, ৬১টি সড়ক এবং নয়টি হাটবাজার হ্রদের পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে হ্রদের পানিতে ডুবে যাওয়া জুড়াছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেলেও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারেনি প্রশাসন।
এদিকে তৃতীয় দিনের মতো কর্ণফুলী নদীতে স্রোত থাকায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনার ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বান্দরবান জেলা, রাঙামাটির রাজস্থলী, কাপ্তাই উপজেলা এবং চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ওসব অঞ্চলের মানুষেরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ১০৮ দশমিক ৭০ ফুট মিন সি লেভেল। ১৬টি জলকপাট সাড়ে তিন ফুট খুলে সেকেন্ডে ছাড়া হচ্ছে ৬৮ হাজার কিউসেক পানি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ রাঙামাটির উপ-পরিচালক মো. মোবারক হোসেন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এসআই