ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

সাতক্ষীরায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ঠাঁই হচ্ছে বস্তিতে, আবাসন সংকটে মানবেতর জীবনযাপন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৮, আগস্ট ২৮, ২০২৫
সাতক্ষীরায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ঠাঁই হচ্ছে বস্তিতে, আবাসন সংকটে মানবেতর জীবনযাপন

সাতক্ষীরা: ‘শহরটা আমরা গড়ি, কিন্তু শহরে আমাদের জন্য জায়গা নেই’ এমন বেদনার সুর ভেসে উঠল সাতক্ষীরার নিম্ন আয়ের মানুষের কণ্ঠে। কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ রিকশা চালান, কেউবা ঝিয়ের কাজ করেন।

অথচ মাথার ওপর একটা নিরাপদ ছাউনি নেই। বৃষ্টি নামলেই ঘরে পানি ঢোকে, শীতে কাঁপতে হয়, গরমে টিনের ঘর আগুনের মতো জ্বলে ওঠে। তবু তারাই শহরটাকে সচল রাখে।

এই অসহায় বাস্তবতা তুলে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সাতক্ষীরার ম্যানগ্রোভ সভাঘরে অনুষ্ঠিত হয় ‘নগরের নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন সংকট ও সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আয়োজিত এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ কর্মী অধ্যক্ষ (অব.) আশেক এ এলাহী।

সংলাপে ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিকের প্রোগ্রাম অফিসার গাজী মাহিদা মিজান।

এতে বলা হয়, সাতক্ষীরা পৌরসভায় তালিকাভুক্ত বস্তি রয়েছে ৪৭টি। পৌরসভার মোট জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ হলেও এর মধ্যে নিম্ন আয়ের পথবাসী, ঝুপড়ি বাসী ও বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। অর্থাৎ প্রতি চারজনের একজন মানুষ বস্তিতে বাস করে। যাদের অধিকাংশই জলবায়ু উদ্বাস্তু। অথচ নগরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের বিবেচনা করা হয়নি।

সংলাপে বস্তির বয়োবৃদ্ধ জবেদা বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রাস্তার পাশে ঝুপড়ির মধ্যে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে থাকি। বৃষ্টি আসলে মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো, বুঝতে পারি না।

গৃহকর্মী হাফিজা বেগম জানান, সারাদিন মানুষের বাসায় কাজ করি। তাদের জন্য সবকিছু রান্না করি। কিন্তু ঘরে ফিরে দেখি হাঁড়ি খালি। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারি না, চিকিৎসা করাতে পারি না।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জীবিকার সংকটে গ্রাম থেকে ছুটে আসা মানুষ শহরের অপরিকল্পিত ও অস্বাস্থ্যকর বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। সেখানেও তাদের নেই নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। প্রতিটি ঋতু পরিবর্তন তাদের জীবনে নতুন বিপর্যয় ডেকে আনে।

তারা আরও বলেন, সংবিধান, এসডিজির লক্ষ্য ও ওয়ার্ল্ড আরবান ফোরামের ঘোষণায় সবার জন্য সমান অধিকার, নিরাপদ আবাসন ও জলবায়ু সহনশীল নগর গড়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়নে তা চোখে পড়ছে না। দরিদ্রদের বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না।

সংলাপে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও দুর্যোগ সহনশীল আবাসন নিশ্চিতকরণ, সরকারি সব সেবাপরিসেবা বস্তিবাসীর জন্য নিশ্চিতকরণ, বস্তিবাসীর জন্য ভর্তুকি মূল্যে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বস্তিবাসীর জন্য শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং সারা বছর ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন নাগরিক নেতা অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাশ, সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎসা দত্ত, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সামাদ, নাগরিক নেতা আলী নুর খান বাবুল, সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান, গোলাম সরোয়ার, এম বেলাল হোসেন, আসাদুজ্জামান সরদার, এস এম বিপ্লব হোসেন, নাজমুস শাহাদাৎ জাকির, যুব সংগঠক ওসমান গনি প্রমুখ।

 

এমআরএম

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।