সিলেট: ভূমি জবর দখল নিতে প্রবাসীর স্ত্রীকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন আবু বক্বর নামে ইউনিয়নের ওয়ার্ড জামায়াতের এক নেতা। প্রবাসীর কেনা ভূমির নামজারি ভাঙিয়ে নিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ৭নং জালালপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি স্থানীয় দক্ষিণ করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্করের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই প্রবাসী আব্দুল মালিক দুলালের স্ত্রী হাজেরা বেগম।
লিখিত বক্তব্যে হাজেরা বেগম বলেন, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর একই গ্রামের নেছার আলীর কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় সাড়ে ১৩ শতক জায়গা কিনেন। ভূমির দলিল গ্রহিতা তার স্বামী আব্দুল মালিক দুলাল ও তার বড় বোনের স্বামী খালেরমুখ নৈখাই গ্রামের মরহুম রইছ মিয়ার ছেলে নুর মিয়া।
২০২১ সালে একই মালিকের কাছ থেকে ৮ শতক জায়গা জামায়াত সভাপতি আবু বক্কর তার শ্যালক ফেঞ্চুগঞ্জের নাজমুদ্দৌলার নামে কেনেন। এরস্থলে তাদের কেনা জায়গার ২.১৭ শতক অর্থাৎ ১০.১৭ শতক তার নিয়ন্ত্রণে নেন আবু বক্কর। এ ভূমি অপদখলের চেষ্টায় বাধা দিলে মূলত হয়রানি করা শুরু হয়।
স্থানীয় মুরব্বিরাও এ নিয়ে সালিশ বৈঠকে সমাধান করে দিতেও ব্যর্থ হন। নেছারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জায়গা বিক্রির কথা অস্বীকার করান জামায়াত নেতা আবু বক্কর। সাড়ে ১৩ শতক জায়গা বিক্রি করলেও এখন বলছেন, ৫ শতক বিক্রি করেছেন। ২০২০ সাল থেকে এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে বিচার পাননি হাজেরা।
হাজেরা বেগম বলেন, গত শুক্রবার বোনের বাড়িতে বিয়েতে গেলে তার জায়গায় দেওয়া বাঁশের বেড়া তোলে ফেলে পাল্টা থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। জামায়াত নেতা উল্টো পুলিশ এনে তাকে হুমকি দিচ্ছেন। জামায়াত নেতা আবু বকর ভূমি বিক্রেতা নেছার আলীকেও নিজের বশে নেন। দলীয় পদ পদবি ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন সময় একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রাণনাশেরও অভিযোগ এনে আদালতে ১০৭ ধারায় কারণ দর্শানোর আদেশসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দরখাস্ত করেন।
লিখিত বক্তব্যে হাজেরা বেগম আরও বলেন, তাদের কেনা ভূমির মধ্যস্থতায় এবং দলিলে সাক্ষী বিক্রেতা নেছার আলীর বড় ছেলে আজির উদ্দিন ও জামাতা আব্দুর রহিম। স্থানীয় মেম্বার আনোয়ার আলীও ছিলেন জায়গা কেনার কথাবার্তায়।
পরবর্তীতে জামায়াত নেতা আবু বক্করের পক্ষে আজির উদ্দিন ও আব্দু রহিম দলিল আদালতে ভাঙার ঘটনায় সাক্ষী দেয়। আদালত থেকে কেবল সাক্ষীদের নোটিশ করা হয়। ক্রেতাপক্ষ হিসেবে তিনি কোনো নোটিশও পাননি। আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জালিয়াতি করে একতরফা দলিল ভাঙানোর রায় নিয়ে নেন জামায়াত নেতা আবু বক্কর।
হাজেরা বেগমের অভিযোগ-নেছার আলী তার মেয়েকে সায়িদাকে হাজেরা বেগম সাজিয়ে দলিল ভেঙে বিক্রি দেখান। এরপর প্রতারণাপূর্বক জামায়াত নেতা আবু বকরের শ্যালক নাজমুদ্দৌলার কাছে বিক্রি দেখান। বিক্রেতা নেছার আলী তার ছেলে ও জামাতাকে দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে আদালতে বলিয়েছেন, আমার কাছে নাকি ৫ শতক জায়গা বিক্রি করেছেন। বাকি জায়গা তিনি দখল নিয়েছেন। সেই সঙ্গে জামায়াত নেতা তাকে চাপে ফেলতে সিএমএম ২য় আদালতে দায়েরকৃত মামলায় (নং-৭৮/২০২২) আমার বিরুদ্ধে প্রতারণার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন।
একইভাবে আদালতে থেকে তিনি ও ভূমির ওপর মালিক নুর মিয়ার নামে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। এভাবে মামলার পর মামলা দিয়ে ক্ষান্ত নন জামায়াত নেতা আবু বক্কর। তিনি তাদের এলাকা ছাড়া করতে নানাভাবে লোকজন মারফতে হুমকি দিয়ে নিঃশেষ করার পরিকল্পনা করছেন। আর বিক্রি করা জায়গাটি মেয়েকে দিয়ে প্রতারণা করিয়ে লিখিয়ে দিয়ে ভয়ংকর প্রতারণার আশ্রয় নেন নেছার। এলাকার লোকজন এসব ঘটনা জানলেও মামলায় জড়ানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলেন না।
এছাড়া কেনা ভূমিতে আপত্তি না করতে সালিশদের সামনের জামায়াত নেতা আবু বক্করকে এক লাখ টাকা দেন নেছার আলী। কিন্তু মামলা তোলার পরিবর্তে উল্টো আমাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিক্রেতা নেছার আলীকে হুমকি দিয়ে কাগজে তার স্বাক্ষর নিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
স্বামী ও ভগ্নিপতির কায়িক শ্রমে কেনা জায়গার দখল নিতে জামায়াত নেতার অপতৎপরতা রুখতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রতারণা করে মেয়েকে প্রবাসীর স্ত্রী বানিয়ে বিক্রি করা ভূমি পুনরায় বিক্রি দেখানো নেছার আলী ও নামজারি ভাঙাতে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া তার ছেলে এবং জামাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সর্বমহলের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রবাসীর স্ত্রী হাজেরা বেগম।
এনইউ/জেএইচ