২০২৩ সালে লালমনিরহাট জেলা শ্রমিক দলের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ১৯ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে সাংবাদিক খোরশেদ আলম সাগরকেও আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট রেলওয়ে শ্রমিক দলের সহ-সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
সাংবাদিক খোরশেদ আলম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ও আজকের পত্রিকার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি। তার নামে মামলা দায়েরের ঘটনায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ও চলবলা ইউনিয়নের দুটি সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করে। চন্দ্রপুরে মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং চলবলায় বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কাজ বাস্তাবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনীত হয়। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি পারফরমেন্স সিকিউরিটি বা কার্যসম্পাদন জামানত জমা দিয়েছে। এখন চুক্তিপত্র তৈরি সাপেক্ষে বাস্তবায়নকারী দপ্তর কার্যাদেশ দিলে কাজ শুরুর কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির।
এরই মধ্যে গত আগস্ট মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় বিএনপির নেতারা কার্যাদেশ ছাড়াই সড়ক খোঁড়া শুরু করেন। যার প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা বিএনপি নেতাদের নামে এলজিইডি লালমনিরহাট ও কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকের পত্রিকায় ‘সড়ক সংস্কারকাজ দখল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সাংবাদিক খোরশেদ আলম মনে করছেন, ওই সংবাদের কারণে তার প্রতি ক্ষেপে যান বিএনপি নেতারা। এজন্য ২০২৩ সালে লালমনিরহাট শ্রমিক দলের কার্যালয় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে যে মামলা হয়েছে সেখানে তাকে জড়ানো হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর থানার ওই মামলায় ১৯ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা এক/দেড়শ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় বিএনপি নেতাদের নামে অভিযোগকারী ঠিকাদার ইলাহী বকসকে ৩ নম্বর, তার ছেলে শামছুল আলমকে ৪ নম্বর ও অপর ঠিকাদার শাহ আযম নয়নকে ৫ নম্বর এবং সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিক খোরশেদ আলম সাগরকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় ঠিকাদার এলাহী বকস ও তার ছেলেকে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে কালীগঞ্জের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ। অপর ঠিকাদার শাহ আযম নয়নের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালালেও গ্রেপ্তার করতে পারিনি।
সংবাদ প্রকাশের জেরে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে সাংবাদিক খোরশেদ আলম সাগর বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিএনপি নেতারা দরপত্র প্রক্রিয়াধীন থাকা সড়ক সংস্কার কাজ দখলে নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যা নিয়ে মূল ঠিকারদাররা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে আমি একাধিক সংবাদ প্রকাশ করি। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২৩ সালে শ্রমিক দলের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটরনায় শনিবারের দায়ের করা মামলায় আমাকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলাটি মূলত আমাকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই, মামলার অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি করছি।
শ্রমিক দলের কার্যালয় ভাঙচুরের মামলার বাদী ফরিদুল ইসলাম বলেন, মামলার আবেদন করা হয়েছে। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা জানি না।
এর বাইরে তিনি আর কিছু বলেননি।
‘রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় সাংবাদিককে জড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
এদিকে ওই মামলায় সাংবাদিক খোরশেদকে জড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী আহমেদ আবু জাফর বলেছেন, ‘কোনো ধরনের পুলিশি তদন্ত ছাড়া একজন পেশাদার সাংবাদিকের নামে মামলা দায়ের করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। ২০২৩ সালে একটি রাজনৈতিক দলের অফিস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০২৫ সালে এসে সাংবাদিক ও কিছু ঠিকাদারের নামে মামলা দায়ের করা চূড়ান্তভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অবিলম্বে সাংবাদিক খোরশেদ আলমকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানাই। অন্যথায়, সারাদেশে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী দলের সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, মামলার ১ নম্বর আসামির বাইরে আমি কাউকে চিনি না। আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘট্নায় ওপরমহলের নির্দেশে মামলাটি হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে একজন সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই সাংবাদিকরা সব সময় সাহসের সঙ্গে সত্যের পক্ষে থাকুক। আমাদের দল সব সময় সাংবাদিকদের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা অবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি এবং একই সঙ্গে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এনসিপি উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, কোনো ঠিকাদার যদি কাজ করতে যান, সেখানে যদি কেউ দখলদারিত্ব করে, কেউ বাধা দিতে চায় তাহলে তারা কেউ জনগণের কথা চিন্তা করে না। পাশাপাশি সেই ঠিকাদারের নামে যদি মামলা করা হয়, আবার সেই ঘটনার নিউজ করলে সাংবাদিকদের মামলায় জড়ানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। পাশাপাশি এ ঘটনায় প্রশাসনেরও ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার অপচেষ্টার এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জেলার ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরন্নবী বলেন, এ মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকের নাম রয়েছে তা মামলা হওয়ার পরে জানতে পেরেছি। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
এসআরএস/এইচএ