ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

চাঁদপুর-৫ মনোনয়ন নিয়ে এখনো শঙ্কায় বিএনপি নেতারা, সরব জামায়াত

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৫৭, অক্টোবর ১০, ২০২৫
চাঁদপুর-৫ মনোনয়ন নিয়ে এখনো শঙ্কায় বিএনপি নেতারা, সরব জামায়াত

চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) সংসদীয় আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা অব্যাহত। বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।

এই আসনটিতে টানা চার বার সংসদ সদস্য ছিলেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রার্থী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।  

বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অনৈক্য থাকায় মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে এখনো শঙ্কা এবং বিভাজন রয়েছে। তবে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থী। প্রচারণায় রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী এবং তাদের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এই নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলায় পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৫জন। নারী ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১জন। সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৫লাখ ১৯ হাজার ২৪৯জন। এর মধ্যে হিজড়া ভোটার ৩জন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই নির্বাচনী এলাকায় ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এবং পরেও বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মমিনুল হক। তবে নির্বাচনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে এই নেতার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এলাকায় বিএনপির ৩১ দফার প্রচারণা নিয়ে মাঠে এসেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ও জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার কামাল। ফলে এই আসনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনো একক নেতায় কুক্ষিগত না হয়ে উন্মুক্ত হয়েছে।

বিগত ১৭ বছর এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক মামলায় বহুবার কারাভোগ করেছেন জামায়াত ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবুল হোসেন। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে এবং পরে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী আগে নির্বাচনী প্রচারণা না করলেও বর্তমানে মাঠে আছেন দলের নির্দেশনা বাস্তবায়নে।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর বাড়ি এই নির্বাচনী এলাকায়। তিনি সরাসরি মাঠ পর্যায়ে এসে প্রচারণা না করলেও রাজনৈতিক মহলে এই আসনে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। গেল জুলাই মাসে দলের নেতারাসহ চাঁদপুরে এলে নির্বাচনী এলাকার শাহরাস্তি দোয়াভাঙ্গায় পৃথক পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোট পেয়েছেন। বিগত পতিত সরকারের আমলে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন এবং এখনও আছেন জানালেন মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মমিনুল হক।  

তিনি বলেন, আমাকে যদি দল থেকে মূল্যায়ন করা হয়, নির্বাচিত হলে কোনো বৈষম্য থাকবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে সরকার থেকে প্রাপ্ত সব কিছু সুষম বন্টন করা হবে। নির্বাচনী এলাকার লোকজন তাদের অধিকার ফিরে পাবেন।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন বলেন, নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থা এবং জনগণ কেমন প্রার্থী চায় এটি উঠে আসবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। এই আসনে মনোনয়ন কাকে দেওয়া হয় বলা যাচ্ছে না। যদি আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং আমি নির্বাচিত হই, তাহলে দুটি উপজেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। আমি প্রবাসে থেকেও এসব বিষয়গুলো উপলব্দি করেছি। কারণ সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে বড় কিছু চায় না। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলেই তারা সন্তুষ্ট থাকেন।

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার কামাল। তিনি বলেন, আমি বিএনপির একজন ক্ষুদ্র কর্মী। দলের সবার সঙ্গে আমার সু-সম্পর্ক। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ৩১ দফা দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করবো। তাহলেই নির্বাচনী এলাকার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শুনছি।

জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন। তিনি এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর একমাত্র মনোনীত প্রার্থী। তিনি বলেন, দল থেকে মনোনীত হওয়ার পরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। লোকজন দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। এটি বাস্তবায়ন হলে সমাজে ইনসাফ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। যে কারণে মানুষ জামায়াতকে ভোট দিতে আগ্রহী।

ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, নির্বাচনী এলাকা পরিকল্পিত ও উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে আমার প্রথম কাজ। নির্বাচিত হলে সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল সব মত ও পথের লোকদের নিয়ে সমন্বিতভাবে হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তির উন্নয়নে কাজ করব।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।