২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ বার দ্রুততম মানবী হয়েছেন শিরিন আক্তার। এই সময়কালে দেশ-বিদেশের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জিতেছেন ৩৩টি গোল্ড মেডেল, ৪টি সিলভার মেডেল ও ব্রোঞ্জ পদক জিতে তিনি হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য।
এবার ২০২৪ সালের অলিম্পিকের দিকে চোখ তার। বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরে শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন শিরিন। ২০২০ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে এই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তবে করোনার কারণে সেই আসর মাঝপথেই বাতিল হয়ে যায়।
এবার খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ না করলেও শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আসরের সঙ্গে থাকছেন তিনি। খেলতে না পারার আফসোস নেই শিরিনের। বরং টুর্নামেন্টের অংশ হতে পেরে গর্বিত বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী। টুর্নামেন্ট নিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরকে জানালেন নিজের ভাবনার কথা।
বাংলানিউজ: শিরিন কেমন আছেন? বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের শুভেচ্ছাদূত হয়ে কেমন লাগছে?
শিরিন- আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আসলে এই টুর্নামেন্টের শুভেচ্ছাদূত হতে পারাটা গর্বের। খেলতে পারলে বেশি ভালো লাগতো। তবে শুভেচ্ছাদূত হয়ে টুর্নামেন্টের সঙ্গে থাকতে পারছি এটাও আনন্দের, খুব ভালো লাগা কাজ করছে। টুর্নামেন্টের আয়োজকদের ধন্যবাদ।
বাংলানিউজ: ২০২০ সালে এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা যদি বলতেন।
শিরিন: ২০২০ সালে আমি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তব সেই আসর করোনার কারণে মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সকলের জীবন থেকেই অনেকগুলো সময় চলে গিয়েছে। অনেক ধকল গিয়েছে। তবে এখন আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়েছে। আবারও এই টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। আমি সেই টুর্নামেন্টের অংশ হতে পেরেছি। এটা ভালো লাগছে।
বাংলানিউজ: এই ধরনের টুর্নামেন্ট খেলোয়াড় উঠে আসতে কতটা সহযোগিতা করে বলে মনে করেন?
শিরিন: এই ধরনের টুর্নামেন্ট নতুন খেলোয়াড় তুলে আনতে অনেক সহযোগিতা করে। এটা প্রতি বছর নিয়মিত আয়োজিত হলে আরও অনেক খেলোয়াড়রা এখান থেকে উঠে আসবে। নতুন প্রজন্ম আরও আগ্রহী হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যারা খেলাধুলা করছে তারা বড় স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাচ্ছে। ছোট ক্যাম্পাস থেকেও ভালো খেলে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ তারা পাবে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করে ধরতে পারবে। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার একটি সুযোগ থাকে।
বাংলানিউজ: সব সেক্টরে খেয়াল করলে দেখবেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তেমন খেলোয়াড় উঠে আসছে না। আপনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলেছেন। আপনার মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মানটা কেমন?
শিরিন: একমসয় ছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা খেলতো তারা শুধু খেলার দিকেই থাকতো। পড়াশুনা তেমন করতো না। এখন তেমনটি নয়। এখন খেলার পাশাপাশি লেখাপড়াও জোর দেয়া হচ্ছে। এখন পড়াশুনাও করছে, বিশ্ববিদ্যালয়েও খেলছে, আবার জাতীয় দলেও সুযোগ পাচ্ছে। এখন খেলার মানও অনেক ভালো এবং খেলোয়াড়ের মানও অনেক ভালো। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা অনেক বেশি।
বাংলানিউজ: খেলোয়াড় খোঁজা কিংবা তৈরির এই কাজটা যদি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে না করে স্কুল পর্যায় থেকে করা হয় তাহলে কি আরও বেশি প্রতিভাবান খেলোয়াড় পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন? তাহলে খুব অল্প বয়স থেকেই তাদের গড়ে তোলা যেত।
শিরিন: অবশ্যই তাই। বিকেএসপি আছে, ফেডারেশন গুলো আছে, তারা ট্যালেন্ট হান্ট পোগ্রাম করে থাকে। সেখান থেকে অনেকেই উঠে আসছে। এছাড়া স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা গুলো যদি আরও আকর্ষনীয় ভাবে করা হয়। আরও ভালো প্রাইজ থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চারা আরও বেশি আগ্রহী হবে খেলার প্রতি। তাদের যদি ঘন ঘন খেলার ইভেন্টে যুক্ত করা যায় তবে আমরা আরও ভালো রেজাল্ট পাবো।
বাংলানিউজ: দ্রুততম মানবী হওয়ার পথটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল আপনার কাছে? বাংলাদেশের নারীদের এই ক্ষেত্রে আগ্রহটা একটু কম থাকে। এখান থেকে বড় কিছু হতে পারার লক্ষ্যটাও তেমন দেখা যায় না।
শিরিন: আসলে আমার কাছে সম্মানটাই বড়। এটা সবার আগে স্থান পায় আমার আছে। অন্যান্য গেমসের তুলনায় টাকা কম হতে পারে। কিন্তু দ্রুততম মানবী পুরো দেশে একজনই হয়। এবং এটা সম্মানের। আগের চাইতে এখন প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই কম। এখন অনেকেই এই দিকে আগ্রহী হয়েছেন। আগের চাইতে অনেক বেশি খেলোয়াড় আসছেন।
বাংলানিউজ: ধন্যবাদ শিরিন। ভালো থাকবেন। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইলো।
শিরিন: ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
এআর/আরইউ