চট্টগ্রাম: বিসিএস নামক সোনার হরিণ সবাই পেতে চায়। কিন্তু কয়জনইবা পায়।
রমিজ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ডেমুশিয়া গান্ধিপাড়ার ব্যবসায়ী এজার আহমেদ ও গৃহিণী ছেনোয়ারা বেগম দম্পতির ৪ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম। তিনি এই এলাকার প্রথম বিসিএস ক্যাডার।
ডেমুশিয়া মোহছেনিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরুর পর ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৭৫ এবং কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৪.৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন সজিবুল ইসলাম রমিজ। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৯তম ব্যাচে ভর্তি হয়ে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
৪৪তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা রমিজকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। গ্রামের মেধাবী সন্তান রমিজকে দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সজিবুল ইসলাম রমিজের বেড়ে ওঠা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ যোগাতেন। সঙ্গে ছিল বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা। কখনো মনোবল হারাননি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছিল স্বাধীনতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে থাকেন রমিজ। তিনি ৪১তম বিসিএসে অংশ নিয়ে নন-ক্যাডারে ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে বান্দরবান সরকারি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত আছেন। চাকরির পাশাপাশি লক্ষ্য ছিলো বিসিএস ক্যাডার হওয়া। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আবারও ৪৪তম বিসিএসে অংশ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ৪৫তম বিসিএসে অংশ নিয়ে প্রিলিমিনারি, রিটেন পরীক্ষা পাস করে ভাইভাতে অংশ নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের একই ব্যাচের সালমা আক্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবন শুরু করেন রমিজ। তিনি বলেন, প্রথমবার ৪১তম বিসিএসে অংশ নিয়ে নন-ক্যাডারে ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত আছি। তবে মন থেকে কখনোই ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছাড়িনি। এরপর ৪৩তম বিসিএসের রেজাল্ট যেদিন দিল, মনে হল এই যাত্রা শেষ। হতাশ হয়েছিলাম, কিন্তু থেমে যাইনি। পাশে থাকা প্রিয় মানুষদের অনুপ্রেরণায় আবারও উঠে দাঁড়াই। ৪৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। সেই মুহূর্ত ছিল, আমার জীবনে এক বড় পাওয়া। অনেক রাত জেগে পড়া, অসংখ্য দোয়া আর আত্মত্যাগের ফল-এই অর্জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তেমন সক্রিয় ছিলাম না এই সময়কালে। বর্তমানে প্রস্তুতি নিচ্ছি ৪৫তম বিসিএসের ভাইভার জন্য।
সজিবুল ইসলাম রমিজের স্ত্রী ইউএসটিসি’র প্রভাষক সালমা আক্তার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই আমাদের পরিচয়। আমরা গণিত বিভাগে একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে সফলতা না আসায় চিন্তায় পড়েছিলেন। আমি সবসময় তাকে শুধু একটা কথাই বলতাম- চেষ্টা চালিয়ে যাও, ভেঙে পড়ো না।
রমিজ বলেন, বিসিএস শুধু একটা চাকরি নয়, এটা নিজের স্বপ্ন, সামর্থ্য আর ধৈর্যের পরীক্ষা। এই দীর্ঘ যাত্রার পেছনে ছিল মা-বাবার স্বপ্ন। ছোটবেলায় যখন পাশের গ্রামে কোনো বিসিএস ক্যাডার আসতেন, বাবা-মা চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতেন। সেই দৃশ্যগুলোই হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। আমার পাড়ায় কোনো বিসিএস ক্যাডার ছিল না। আমি শুধু নিজের জন্য নয়, মা-বাবার মুখে হাসি দেখার জন্যই এতদূর এসেছি। তারা চেয়েছেন বলেই আমি স্বপ্ন দেখতে শিখেছি। প্রত্যেকটি বিসিএস আমার জন্য একেকটি অধ্যায়-কখনো কষ্টের, কখনো অপেক্ষার, আবার কখনো আনন্দের। আমি বিশ্বাস করি-যে থেমে যায়, সে হেরে যায়। আমি এখনো থামিনি। পেছনের ব্যর্থতাগুলো আমাকে থামিয়ে দেয়নি, বরং এগিয়ে চলার সাহস দিয়েছে।
এমআই/টিসি