চট্টগ্রাম: দিনের বেলাতেই বড় বড় মশার উৎপাত। চমৎকার সব পোড়ামাটির শিল্পকর্ম ঢাকা পড়ছে আগাছায়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান চিত্র এটি। এতে উদ্বেগ বাড়ছে নগরের সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি শহীদ মিনারটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) হস্তান্তর করা হলে মশা, নেশা, আগাছা, আলোকস্বল্পতা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সবই দূর হবে।
নবনির্মিত চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশায় শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণসহ প্রায় তিনশ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গ্রন্থাগার ও অডিটোরিয়াম ভবনের কাজ শতভাগ শেষ না হলেও শহীদ মিনারের কাজ প্রায় শেষ। চার বছর পর গত একুশে ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও প্রশাসনের উদ্যোগে নবনির্মিত শহীদ মিনারে প্রথম শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রামবাসী। এরপর থেকে নানা দিবস ও উপলক্ষে সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে যাচ্ছেন শ্রদ্ধা জানাতে। কেউবা সপরিবারে, সবান্ধবে ঘুরতে যান শহীদ মিনারের সামনের পাবলিক প্লাজায়। উদ্দেশ্য একটাই শিশু-কিশোর, তরুণদের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করানো। কিন্তু হতাশ হতে হচ্ছে তাদের।
জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) চট্টগ্রাম মহানগর সদস্যসচিব মামুনুর রশীদ শিপন বাংলানিউজকে বলেন, গত ১ আগস্ট রাত ১২টা এক মিনিটে আমরা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাই। সেখানে ভুতুড়ে পরিবেশে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য দেখে হতবাক হয়ে যাই। আমাদের সঙ্গে প্রচুর নেতা-কর্মী, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী থাকায় কর্মসূচি পালন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
তিনি বলেন, নগরের প্রাণকেন্দ্রে আমাদের চেতনার বাতিঘর খ্যাত শহীদ মিনার আগাছায় ভরে গেছে। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ চারপাশে। লাইট নেই বললেই চলে। আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় সিঁড়ির গোড়ায় ফটক লাগানো দরকার। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা উচিত। তাহলে পবিত্রতা, পরিবেশ, নান্দনিকতা সব রক্ষা পাবে।
সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র আবদুর রহমান জানান, এখানকার পরিবেশ খুব খারাপ। একবার কেউ আসলে দ্বিতীয়বার আসতে চাইবেন না। আগাছা গিলে খেতে চায় চমৎকার সব পোড়ামাটির ম্যুরাল। শ্যাওলা জমে গেছে মুক্তমঞ্চের বসার আসনে, উপরে ওঠার সিঁড়িতে। পাশে ময়লাপানির স্রোতধারা দেখে চোখ কপালে উঠবে যে কারও। লাইটপোস্টগুলো ফাঁকা। কোথাও বৈদ্যুতিক তার হা করে আছে। ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি চারপাশে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শহীদ মিনার এলাকার কাজ শতভাগ শেষ বলা যায়। অনেক লাইট চোরেরা খুলে, ভেঙে নিয়ে গেছে। শুধু লাইট নয়, বৈদ্যুতিক তারও খুলে নিয়ে গেছে। এখানে কোনো গেইট রাখা হয়নি। তাই রাতের বেলাতে চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। নতুন করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন লোকজনের ওঠার সুবিধার্থে র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে গেইট লাগানোর বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
চসিকের মশক ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি বাংলানিউজকে বলেন, শহীদ মিনার এলাকাটি আমি সরেজমিন দেখেছি। নির্মাণাধীন প্রকল্প হওয়ায় বৃষ্টির কিছু পানি জমে থাকতে দেখেছি। আগাছার ঝোপও আছে। চসিকের পক্ষ থেকে ২২ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের স্প্রে ম্যানদের নিয়মিত ওষুধ ছিটাতে নির্দেশনা দিয়েছি।
চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার ২১২ দশমিক ২৮ বর্গফুট জায়গায় ১৫ তলা বিশিষ্ট ১টি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার, ১৪ হাজার ৪৯৩ দশমিক ২২ বর্গফুট আয়তনের ১টি মাল্টিপারপাস হল ও সেমিনার হলের পাশাপাশি ৭ হাজার ৪১৩ দশমিক ৬০ বর্গফুট আয়তনের জনসমাগম স্থান তৈরি করা হয়েছে। মূল সড়কের দুই পাশে যাতায়াতে তৈরি হয়েছে টানেল। সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বেশ কিছু ভাসমান দোকান গড়ে উঠেছে। যাতে পথচারীদের অসুবিধা হচ্ছে।
এআর/টিসি