চট্টগ্রাম: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী একদল সৎ দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, জামায়াতের প্রার্থীরা একদিকে যেমন সৎ দক্ষ ও খোদাভীরু অপরদিকে শ্রমিক বান্ধব।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে নগরের হোটেল সৈকতে আয়োজিত দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী-এর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও নগর ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ইসলাম শ্রমজীবী মানুষদের এক অনন্য সম্মানে ভূষিত করেছে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) নিজের শ্রমিক ছিলেন এবং শ্রমিকদের সবচেয়ে আপনজন ছিলেন। তিনি বলেছেন, শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু। শ্রমিকদের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে তিনি তাদের মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আমাদের নবী কঠুরি আঘাতে জর্জরিত শ্রমিকের হাতে চুমু খেয়েছেন। তিনি বলেছেন শ্রমিকদের হাশর হবে তাঁর সাথে এবং শ্রমিকরা ৫০০ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসুল (সা.) এভাবে শ্রমিকদের সম্মানিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজকের শ্রমিকরা অবহেলিত নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। কোথাও কোথাও এখনো শ্রমিকদের পর জুলুম নির্যাতনের স্টিভ রোলার চলছে। শ্রমজীবী মানুষের একমাত্র মুক্তির পথ হচ্ছে ইসলামী শ্রমনীতি। এই নীতি বাস্তবায়ন ব্যতীত শ্রমিকদের মুক্তি অসম্ভব। দেশে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে হবে। অতীতে দেখেছি একদল মানুষ ভোটের আগে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার উপমা তৈরি করে। ভোট শেষ হয়ে গেলে তারা ও তাদের উপমা উধাও হয়ে যায়। এরকম মৌসুমী ব্যক্তিদের দ্বারা ইসলাম ও শ্রমিকদের খেদমত হতে পারে না। সুতরাং আগামী নির্বাচনে শ্রমিকদের সত্যিকারের ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা ব্যক্তিদের বিজয়ী করতে হবে। ভন্ড ও প্রতারকদের মিষ্টি কথায় ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না।
অধ্যাপক মুজিব বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধুলিস্যাৎ করার চক্রান্ত চলছে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেনি। তারা এ রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন চেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মাঠের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজকে সারা দেশের মানুষ আমাদের কর্মসূচির সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছে। আমরা মনে করি গণমানুষের এই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন না করে দেশে কোন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে না। একই সঙ্গে দেশ টেকসই গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে পারবে না।
মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাত্তোত্র বাংলাদেশ যারা ৫৪ বছরেও দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারেনি। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। উল্টো দুর্নীতি লুটপাট করে দেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করেছে। ছাত্র জনতা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তাদেরকে লাল কার্ড দেখিয়ে বিদায় করেছে। আজকে কিছু মানুষকে দেখছি দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজের ভূমিকায়। আমরা তাদেরকে স্মরণ করে দিতে চাই এই দেশের ছাত্র জনতা আর কোন চাঁদাবাজ দখলদার ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিবে না। সুতরাং সময় থাকতে আপনারা নিজেদের সংশোধন করুন। ইতিবাচক রাজনীতির মাঠে ফিরে আসুন।
সভাপতির বক্তব্যে এস এম লুৎফর রহমান বলেন, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষরা আর কতকাল লুটপাট ও দুর্নীতির বোঝা বহন করবে। শ্রমিকের ঘামে অর্জিত সম্পদ একদল মানুষ দিনে দুপুরে বিদেশে পাচার করছে। শ্রমিকদের ঠকিয়ে, মজুরি কম দিয়ে তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। এ সকল অসৎ নেতৃত্ব থেকে মুক্তির জন্য শ্রমজীবী মানুষরা উন্মুখ হয়ে আছে। শ্রমিকরা এখন সৎ দক্ষ ও দেশপ্রেমিক মানুষের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা তুলে দিতে বদ্ধপরিকর। আগামী নির্বাচনে শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নজির হোসেন, মকবুল আহমেদ ভূঁইয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শিহাব উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, কোষাধক্ষ্য মোঃ নুরুন্নবী, দপ্তর সম্পাদক স ম শামীম , ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক মাওলানা জাহাঙ্গির আলম, পাঠাগার সম্পাদক ইন্জি সাইফুল ইসলাম,সহ-প্রচার সম্পাদক আবদুর রহীম মানিক প্রমুখ।
বিই/পিডি/টিসি