চট্টগ্রাম: রাজনীতি ও বালুর ব্যবসার প্রভাব বলয়ে আরও এক প্রাণহানি, দিনদুপুরে গুলি করে খুন করা হলো রাউজান ব্যবসায়ী মো.আবদুল হাকিমকে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) হাটহাজারীর মদুনাঘাটে প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ড শুধু এলাকায় নয়, পুরো চট্টগ্রামে ছড়িয়েছে উদ্বেগ।
পুলিশ জানায়, ব্যবসায়ী মো.আবদুল হাকিমের ব্যবহৃত গাড়িতে ২২টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ২০০ মিটার। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিহত হাকিমকে বিএনপির কর্মী হিসেবে তার পরিবার দাবি করলেও দলীয়ভাবে তা অস্বীকার করা হয়েছে, যা নিয়ে দলে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
আবদুল হাকিমের ভাই পারভেজ আলম বলেন, আমার ভাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। তার হামিম এগ্রো এবং ভেষজ ওষুধের ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে তিনি বাগানবাড়ি থেকে গরুর খামারে যান এবং সেখান থেকে শহরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে গাড়ি আটকে তাকে গুলি করে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। তার বুকে গুলি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারো বিরোধের কথা জানি না। ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। রাউজানে এর আগে রাজনীতির জন্য অনেক খুনাখুনি হয়েছে। আর যেন কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়।
জানা গেছে, রাউজানের নোয়াপাড়ায় আবদুল হাকিমের দেশ হারবাল নামের ভেষজ ওষুধ কারখানা আছে। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ওষুধ তৈরির কারখানা ও দোকানে অভিযান চালায় র্যাব-৭। অভিযানে টেলি ওয়ান শপিং ও দেশ হারবাল নামের দুটি নকল ওষুধ তৈরির কারখানা থেকে জব্দ করা হয় ওষুধ।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং অস্ত্র আইনে ৭টি মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকার গুলশান, সূত্রাপুর, রামপুরা, মাদারীপুর, নেত্রকোণা ও রাউজান থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে।
১৯৯১ সাল থেকে নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০২২ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভূপেষ বড়ুয়ার হাত ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পুনরায় রাউজানে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
পুলিশ বলছে, কর্ণফুলী এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তবে বালু ব্যবসা নাকি রাজনীতি-কি কারণে এই হত্যাকাণ্ড, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার মোবাইল ফোনে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তা তদন্তের আওতায় আছে।
হাটহাজারীর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী তারেক আজিজ বাংলানিউজকে জানান, কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে হেলমেট এবং মাস্ক পরা অস্ত্রধারীরা গুলি করে পালিয়ে যায়। আমরা একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। অস্ত্রধারীদের সনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।
রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহম্মদ জানান, নিহত আবদুল হাকিম বিএনপির সমর্থক ও একজন ব্যবসায়ী। তিনি রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন এলাকার মৃত আলী মদন চৌধুরীর ছেলে।
তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কয়েকটি গণমাধ্যমে নিহত ব্যক্তিকে (আবদুল হাকিম) বিএনপির কর্মী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন। নিহত ব্যক্তি ও দুষ্কৃতকারীদের কেউই বিএনপির নেতা-কর্মী নন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট থেকে রাউজানে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ১২ জন রাজনৈতিক হত্যার শিকার। বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক গুলিবিদ্ধ ও অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে, কিন্তু গ্রেপ্তারের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
এমআই/টিসি