ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

সংগ্রামী ইরফান খানের বর্ণিল জীবন

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২০
সংগ্রামী ইরফান খানের বর্ণিল জীবন ইরফান খান

বলিউডের শক্তিশালী অভিনেতা ইরফান খানের প্রয়াণে শোকে কাতর বিনোদন দুনিয়া। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, শচীন টেন্ডুলকাল থেকে শুরু করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সকলেরই একই অনুভূতি, তার অভাব পূরণ হওয়ার নয়। 

১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি জয়পুরে জন্ম নিয়েছিলেন ইরফান খান। শুরুতে তিনি একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিলেন।

তবে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ তার হয়নি। ১৯৮৪ সালে যখন তিনি মাস্টার্সের ছাত্র, তখনই ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা, দিল্লিতে শিক্ষাবৃত্তি পান। সেখানে পড়াশুনা শেষে মুম্বাইয়ে এসে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি। শুরুতেই অনেকগুলো টেলিভিশন ধারাবাহিকে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে চাণক্য, ভারত এক খোজ, সারা জাহান হামারা, বনেগি আপনি বাত, চন্দ্রকান্ত, শ্রীকান্ত, স্পর্শ অন্যতম।

ইরফান খান বড় পর্দায় অভিষেক করেন ১৯৮৮ সালে। ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার প্রথম সিনেমা মীরা নেয়ার পরিচালিত ‘সালাম বোম্বে’ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পায়। ১৯৯০ সালের আর্ট ফিল্ম ‘এক ডক্টর কি মৌত’-এ তার অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়। মূলত শুরু থেকেই অভিনয় জগতে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন ইরফান।  

লন্ডনভিত্তিক চিত্রপরিচালক আসিফ কাপাড়িয়া ইরফানকে ‘দ্য ওয়ারিয়র’ (২০০১) সিনেমার প্রধান চরিত্রে রূপায়নের পর পশ্চিমা বিশ্বে তিনি সুপরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক অনেক চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি ভূয়সী প্রশংসা পায়।  

ইরফান খান

বলিউডে ‘হাসিল’ (২০০৩) ও ‘মকবুল’ (২০০৪) ইরফানের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। ‘হাসিল’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা খলনায়ক হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেন ইরফান। ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ (২০০৭) সিনেমার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার পান। ফিল্মফেয়ারে ইরফান ‘পান সিং তোমার’ (২০১২) সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা (সমালোচক) এবং ‘হিন্দি মিডিয়াম’ (২০১৭) সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয় করেন।

প্রধান চরিত্রে ইরফান অভিনীত বলিউডের প্রথম বাণিজ্যিক সিনেমা ‘রগ’ (২০০৫)। এছাড়া তার অভিনীত ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ (২০১৩), ‘গুণ্ডে’ (২০১৪), ‘পিকু’ (২০১৫’ ও ‘তালওয়ার’ (২০১৫) দারুণ সফলতা পায়।  

বলিউড ছাপিয়ে হলিউডেও একের পর এক সম্মানজনক সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইরফান খান। এর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য নেমসেক’ (২০০৬), ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’ (২০০৭), অস্কারজয়ী সিনেমা ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ (২০০৮), ‘নিউইয়র্ক, আই লাভ ইউ’ (২০০৯), ‘দ্য অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান’ (২০১২), ‘লাইফ অব পাই’ (২০১২), ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ (২০১৫) এবং ‘ইনফারনো’ (২০১৬)।

ইরফান খান অভিনয় করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অভিনীত ‘ডুব’ সিনেমায়

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরফান খানের শরীরে অজ্ঞাত রোগ ধরা পড়ে। পরবর্তীতে এটা নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারে পরিণত হয়। লন্ডনে প্রায় এক বছর চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। প্রতীক্ষিত ‘আংরেজি মিডিয়াম’ সিনেমার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। ২০২০ সালে প্রতীক্ষিত সিনেমাটি মুক্তির সপ্তাহখানেকের মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা প্রদর্শনী।

২০২০ সালে ২৫ এপ্রিল মারা যান ইরফান খানের মা সাঈদা বেগম। মায়ের মৃত্যুতে প্রচণ্ডভাবে ভেঙে পড়েন ইরফান। লকডাউন ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে মায়ের অন্তিম সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। ভিডিও কলের মাধ্যমে তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেন।  

এরপর নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন ইরফান। ২৮ এপ্রিল তাকে ভর্তি করা হয় মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে। সেখানেই তিনি পরিবার ও স্বজনদের পাশে রেখে চলে যান না ফেরার দেশে, মায়ের কাছে। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী সুতপা সিকদার, দুই ছেলে বাবিল ও অয়ণ এবং অসংখ্য গুণগ্রাহীকে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২০
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।