ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিনা অপরাধে বন্দি ছিল ৯ বছরের ফিলিস্তিনি আহমাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
বিনা অপরাধে বন্দি ছিল ৯ বছরের ফিলিস্তিনি আহমাদ

অপরাধ প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও নয় বছর কারাগারে কাটিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছে ফিলিস্তিনি কিশোর আহমাদ মানাসরা। ১৩ বছর বয়সে গ্রেপ্তার হওয়া এই তরুণ বর্তমানে ২৩ বছরের যুবক।

দীর্ঘ কারাবন্দি জীবনে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও ইসরায়েলি আদালত একাধিকবার তার আগাম মুক্তির আবেদন নাকচ করেছে।

গত বৃহস্পতিবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আহমাদের আইনজীবী খালেদ জাবারকা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০১৫ সালে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে পিসগাত জি’ভ নামের অবৈধ বসতির কাছে চাচাতো ভাই হাসান মানাসরার সঙ্গে ছিল আহমাদ। সেসময় হাসান দুই ইসরায়েলিকে ছুরিকাঘাত করলে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি করে তাকে হত্যা করে। অন্যদিকে, আহমাদকে একদল ইসরায়েলি বেধড়ক মারধর করে ও গাড়িচাপা দেয়। এতে তার মাথার খুলি ভেঙে যায় ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়।

ঘটনার সময়কার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা আহমাদকে নিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের উপহাস করতে দেখা যায়।

যদিও আহমাদ কাউকে ছুরি মারেননি এবং আদালতও বিষয়টি স্বীকার করেছে, তবুও তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

২০২১ সালের নভেম্বরে এক বন্দির সঙ্গে বিবাদের জেরে আহমাদকে একটি ছোট একাকী কক্ষে বন্দি রাখা হয়। আইনজীবী জানান, আহমাদ দিনে ২৩ ঘণ্টা বন্দি থাকত। সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। নিদ্রহীনতা, ভ্রম ও সন্দেহজনিত সমস্যায় ভুগত। এমনকি আত্মহত্যারও চেষ্টা করে।

তার পরিবার জানিয়েছে, কারাবাসকালে তাকে মাঝে মাঝে মানসিক হাসপাতালের ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হতো এবং সেখানে ইনজেকশনের মাধ্যমে তাকে মানসিকভাবে স্থিত রাখার চেষ্টা করা হতো।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) একজন চিকিৎসক প্রথমবারের মতো তাকে পরীক্ষা করেন। তখন জানা যায়, আহমাদ স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসক সতর্ক করে বলেন, কারাবন্দিত্ব চলতে থাকলে তার মানসিক স্বাস্থ্যে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

তার মুক্তির দাবিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছিল। তবে ‘সন্ত্রাসবাদে’ অভিযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার তার মুক্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।

আহমাদের মামলার সময় ইসরায়েল শিশু আইনে পরিবর্তন এনে ১২ বছর বয়সীদেরও ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে’ অভিযুক্ত করার সুযোগ রাখে।

আইনজীবী জাবারকা জানান, কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে এমন জায়গায় ফেলে আসা হয়, যেন পরিবার তাকে খুঁজে না পায়। পরে নেগেভ এলাকার এক পথচারী তাকে খুঁজে পেয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটে।

তিনি বলেন, আমরা জানি জেলে থাকার সময় সে খুব অসুস্থ ছিল। এখন তার স্বাস্থ্যের বিস্তারিত জানার অপেক্ষায় আছি।

আহমাদের মুক্তিকে ‘বিরাট স্বস্তি’ উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক পরিচালক হেবা মোরায়েফ বলেন, এই দীর্ঘ কারাবাস, নির্যাতন এবং মানসিক যন্ত্রণা কখনোই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

সূত্র: আলজাজিরা

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।