ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

জিএমটি সময় আর থাকছে না?

জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫৮, নভেম্বর ৪, ২০১১
জিএমটি সময় আর থাকছে না?

লন্ডন: আন্তর্জাতিক সময়মান হিসেবে গ্রিনউইচকে (জিএমটি) আর না রাখার একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে জড়ো হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা।

সময় হিসাবের জন্য ১২০ বছর ধরে গ্রিনউইচ মিন টাইম বা জিএমটিকে মানদণ্ড ধরা হচ্ছে।

কিন্তু সময়ের নতুন সংগায় এই মানদণ্ড এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অধিকতর নিখুঁতভাবে সময় পরিমাপের জন্য বিজ্ঞানীদের বেশির ভাগই এখন পৃথিবীর ঘূর্ণনের ভিত্তিতে নয় বরং আনবিক ঘড়ির ওপর নির্ভর করার পক্ষাপাতি।

জিএমটিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে ব্রিটেন। তা সত্ত্বেও ২০১২ সালের জানুয়ারিতে জেনেভায় এই প্রস্তাব নিয়ে অনুষ্ঠেয় সভায় ভোট হবে। ভোটে যদি নতুন প্রস্তাব অনুমোদন পায় তাহলে জিএমটি তখন হবে শুধুই ইতিহাস।

উত্তর-পশ্চিম লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি শুক্রবারই শেষ হবে। শীর্ষ ৫০ জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে ওই সভাটি আয়োজন করেছে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটি।

সময়মান পরিবর্তন ইস্যুতে মাথা চাড়া দিয়েছে ব্রিটেন-ফ্রান্স মর্যাদার লড়াই। জিএমটি যেহেতু ব্রিটেন ভিত্তিক তাই ব্রিটিশরা একে তাদের জাতীয় গৌরব বলেই মনে করে।

ব্রিটিশদের অভিযোগ, জিএমটি পরিবর্তনের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে তাদের পুরনো শত্রু ফ্রান্স।

অবশ্য সময়মান পরিবর্তনের জন্য তাগাদা দিয়ে আসছে ফ্রান্স ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ অধিদপ্তর (বিআইপিএম)।

এই প্রতিষ্ঠানের সময় বিভাগের পরিচালক এলিসা ফেলিসিতাস আরিয়াস এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, ব্রিটেনে জিএমটির ব্যাপারে কিছু একটা হারানোর অনুভূতি কাজ করছে। ’

সময়মান নির্ধারণে জিএমটিকে মানদণ্ড ধরা হয়েছে সুর্যের গতিপথের ভিত্তিতে জিরো ডিগ্রি মধ্যরেখার ওপর নির্ভর করে যা দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের গ্রিনউইচ মানমন্দিরে অবস্থিত।

১৮৮৪ সালে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে একে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

তবে ওই একই সময় ফ্রান্সও প্যারিস মিন টাইম বা পিএমটি স্বীকৃতির জন্য সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য তদবির করেছিল।

১৯৭২ সালে আবার জিএমটির স্থলে ইউনিভার্সাল কো-অরডিন্যাটেড টাইম (ইউটিসি) ব্যবহার শুরু হয়। তবে এর হিসাব জিএমটির সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়।

ইউটিএস নির্ধারণ করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাগারে রক্ষিত ৪০০টি আনবিক ঘড়ির ওপর ভিত্তি করে। তবে এই সময়মান পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কয়েক সেকেন্ডের সংশোধন করা হয়েছে।

পৃথিবীর ঘূর্ণন সব সময় একই না থাকার কারণে সমস্যা রয়েই গেছে। পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি এবং পরমাণুর গতির মধ্যে সূক্ষ্ণ পার্থক্যের কারণে গ্লোবাল পরিজশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এবং মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

আরিয়াস বলেন, ‘এই দুই নেটওয়ার্ককে দুই সময়ের মিলিসেকেন্ড পার্থক্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সময়ের একটি সমান্তরাল সংগা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এমন একটি বিশ্বের কথা ভাবুন, যেখানে কিলোগ্রামের একাধিক সংগা রয়েছে। ’

লন্ডনের সভায় জিএমটির সময়ে কয়েক সেকেন্ড এগিয়ে থাকার ভুল সংশোধন এবং পুরোপুরি আনবিক সময়ের দিকে যাওয়ার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

জিএমটির সঙ্গে আনবিক ঘড়ির সময়ের পার্থক্য হয় খুব ধীরে। ৬০ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে এই পার্থক্য দাঁড়াবে এক মিনিট এবং ৬শ বছরে এই পার্থক্য হবে এক ঘণ্টা।

এতে করে দুই সময়কে একই মানে আনতে এক শতকের মধ্যে দুই বার করে কয়েক মিনিট সময় সংশোধন করে নিতে হতে পারে।

ব্রিটেনের গণমাধ্যম জিএমটি পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে নানা ধরনের কথা বলছে। কেউ বলছে এটা ভিক্টোরিয়ান পরাশক্তির একটি প্রতীক। সুতরাং ওই পরাশক্তির মতোই একেও পরিণতি বরণ করতে হতে পারে।

ব্রিটেনের বিজ্ঞানমন্ত্রী অবশ্য এই পরিকল্পনাকে অবৈজ্ঞানিক বলে বর্ণনা করছেন।

এদিকে চীনও এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, চীনের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ভিত্তিতেই সময় নির্ধারণ করতে চান।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।