ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ইসলামপুর হোটেলের কথা ৪০ বছরেও ভুলতে পারেননি মুন

সুকুমার সরকার, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১২, নভেম্বর ১২, ২০১১
ইসলামপুর হোটেলের কথা ৪০ বছরেও ভুলতে পারেননি মুন

ঢাকা : ১৯৭২ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ভাইস কন্সাল হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসতেন।

কারণ, সে সময় ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস ছিল না।

  অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নবপরিনীতা স্ত্রী ইউ সুন টায়েককে নিয়ে ঢাকায় গেলে থাকতেন পুরান ঢাকার ইসলামপুরের একটি হোটেলে।

সে স্মৃতি আজো ভুলতে পারেননি। এজন্যে আসন্ন ঢাকা সফরের সময় তিনি সেই হোটেল দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেনের কাছে।

১০ নভেম্বর রাতে (বাংলাদেশ সময় ১১ নভেম্বর সকাল) নিউইয়র্কে রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেনের বাসায় নৈশভোজে অংশ নিয়ে সেই দিনের স্মতিচারণ করতে করতে মি. বান হাসি আনন্দে মেতে ওঠেন।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিধ্বস্ত চেহারার কথাও মনে রেখেছেন। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল সে কথাও ভোলেননি বান কি-মুন।

এ সময় তিনি তার বিয়েতে পাওয়া (১৯৭০ সালে) উপহার হিসেবে একটি পারকার কলমের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। সেই কলমটি দিয়েছিলেন তার ৮ ভাইয়ের একজন-যিনি এখন বেঁচে নেই।

ঐ কলম দিয়েই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যেকার দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের শুরুতে একটি চুক্তিতে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। কলমটি এখনও স্মৃতি হিসেবে রয়েছে বলে মহাসচিব উল্লেখ করেন।

মহাসচিবের কয়েকজন সহকর্মীও ডিনার পার্টিতে ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। বিশেষ করে বিশ্বে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং গরিব রাষ্ট্রে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচন ঘটানো কীভাবে সম্ভব হবে-তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন।

মহাসচিব মনে করেন যে, সুচিন্তিত নেতৃত্বের মাধ্যমেই এসব সম্ভব হবে। শেখ হাসিনার শান্তির মডেলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহাসচিব বান কি-মুন বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐ মডেল অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। বার্তা সংস্থা এনাকে এসব তথ্য জানান রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন।

অপরদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক  এনাকে জানান, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড  এবং ইন্দোনেশিয়া সফরের উদ্দেশ্যে বান কি-মুন (৬৭) ১২ নভেম্বর নিউইয়র্ক ত্যাগ করছেন। বাংলাদেশের সফর শুরু হবে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কম্যুনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক পরিদর্শনের মাধ্যমে।

প্রশিক্ষিত ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং প্রসূতি ও নবজাতক উভয়েই সুস্থ্য থাকার ঘটনা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করবেন বান কি-মুন। সরকারী ব্যবস্থাপনায় এসব কম্যুনিটি ক্লিনিক পরিচালিত হচ্ছে।

মি. ফারহান আরো জানান, ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী  বান কি-মুন ব্র্যাক এবং সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি প্রকল্প পরিদর্শন করবেন।

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের ভাগ্য পরিবর্তনের ঘটনাবলী এবং সে সব পরিবারের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয় তিনি দেখবেন। ঢাকায় তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়ারিয়া ডিজিজ রিসার্চ (আইসিডিডিআর) পরিদর্শন করবেন ।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্পর্কিত একটি উচ্চ পর্যায়ের ফোরামেও মহাসচিব অংশ নেবেন। এই ফোরামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বক্তব্য রাখবেন।  

১৯৮৫ সালে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট থেকে লোক প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী কূটনীতিক বান কি-মুন গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ (বিপসট) পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের সময় নিহত বাংলাদেশিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মহাসচিব বক্তব্য রাখবেন। আর্ত মানবতার সেবা, বিশ্বশান্তি, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকি থেকে এ বিশ্বকে রক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে নিরাপদ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের ভূমিকার বণৃনা তুলে ধরবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে।  

১৬ নভেম্বর থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে মহাসচিব রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেতা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে  বৈঠকে মিলিত হবেন।    

রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন জানান, দ্বিতীয় টার্মের জন্যে নির্বাচিত হলে সর্বপ্রথম তিনি দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশে যাবেন- এমন একটি অঙ্গীকার ছিল বান কি-মুনের। এ সফরের মাধ্যমে তা পূরণ হতে চলেছে।

তিনি জানান, ২৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন মহাসচিবের সঙ্গে। রাষ্ট্রদূত মোমেন  মহাসচিবের এ সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।