ঢাকা: পৃথিবীতে লাখ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার জোগাতে পারে বনজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। বন-জঙ্গলের প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ লতাপাতা, ফল-মূল এবং কন্দ এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতিসংঘ সমর্থিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা শনিবার এই তথ্য দিয়েছে।
টেকসই বন ব্যবস্থাপনা এবং পুবর্নাসনের লক্ষ্যে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থাসহ ১৪ সদস্যের সংগঠন কোলেবরেটিভ পার্টনারশিপ অন ফরেস্ট (সিপিএফ) বলছে, পৃথিবীতে একশ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের বিশেষ করে বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষদের খাবার জোগান দিতে বনের ভূমিকাকে খাটো করে দেখা যাবে না।
এ কারণে বন থেকে নিয়ন্ত্রণহীন কাঠ সংগ্রহ ঠেকানোর জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) সহকারী মহাপরিচালক এডোয়ার্ডো রোজাস ব্রিয়ালেস বলেন, ‘বিশ্বের একশ কোটিরও বেশি দরিদ্রতম মানুষের জন্য বন এবং গাছপালা খাদ্য ও আয়ের সরাসরি উৎস। ’
তিনি বলেন, প্রধান খাবারের সঙ্গে পুরিপূরক খাবারও সরবরাহ করে এই উৎস। এ কারণে বন বাঁচাতে টেকসই ব্যবস্থা নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি জানান, ভারতে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ জীবিকার জন্য সরাসরি বনের ওপর নির্ভরশীল। অপর দিকে লাওসের ৬৪ লাখ মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশই বন থেকে সংগৃহীত খাবার খেয়ে বাঁচে।
গবেষকরা বলছেন, গরীব মানুষদের নিম্নানের খাবারের পাশাপাশি বনজ খাবার এবং বন্য পশু পরিমাণে কম হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনেক বনজ লতাপাতা ভিটামিন এ ও সি, আমিষ এবং ক্যালাসিয়াম ও লোহার মতো পুষ্টি উপাদানের জন্য একটা চমৎকার উৎস। এছাড়া বন্য ফলে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ ও ভিটামিন থাকে, উপরন্তু এরা উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ ক্যালরি যোগান দেয়।
অনেক বনজ উদ্ভিদের মূল খাওয়ার যোগ্য। এসব মূল বা কন্দে প্রচুর পরিমাণে শর্করা এবং খনিজ লবণ থাকে।
কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, অনেক উন্নয়নশীল দেশে ক্রমাগত বন ধ্বংসের কারণে বন্য প্রাণী এবং বনজ খাবারের প্রতি হুমকি দিন দিন বাড়ছে। একারণে সেসব দেশে জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
বনজ উদ্ভিদ এবং বন থেকে সংগৃহীত বস্তু প্রক্রিয়াকরণে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে এ থেকে তারা আয়ও করেন।
যেমন, পশ্চিম আফ্রিকার নারীরা রান্নার তেল সংগ্রহের জন্য শিয়া গাছের ফল থেকে তেল সংগ্রহ করেন।
প্রক্রিয়াজাত শিয়া ফল চকলেট এবং অন্যান্য মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ওই অঞ্চলের নারীরা এ থেকে সংসারের মোট আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আয় করেন।
একইভাবে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করেই জীবন নির্বাহ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় উপজাতিরা পাহাড়ের খাঁজে জুম চাষ করে নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করার পরেও উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্জন করে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১১