নিউইয়র্ক: ভাড়াটে সৈনিকের ব্যবসা বাড়ছে বিপজ্জনক হারে। সেই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি এবং জবাবদিহিতা ছাড়াই হু হু করে বাড়ছে সামরিক ও নিরাপত্তা সেবাদানকারী কোম্পানি।
জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দল ক্রমবর্ধমান এই বিপজ্জনক ব্যবসার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ভাড়াটে সৈনিকের (মারসেনারি) বিষয় নিয়ে কাজ করে এমন পাঁচ সদস্যের একটি দল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন, সম্প্রতি লিবিয়া এবং আইভরি কোস্টে নিয়োগ দেওয়া ভাড়াটে সৈনিকেরা ভয়াবহ রকমের মানবাধিকার লংঘন করেছে। এছাড়া ইরাক-আফগানিস্তানসহ অন্য দেশে কর্মরত সামরিক ও নিরাপত্তা কোম্পানির কিছু ঠিকাদাররা একই ধরনের কাজ করছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলটির প্রধান ফাইজা প্যাটেল গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভাড়াটে সৈনিকের ব্যবসা বন্ধে এবং সামরিক ও নিরাপত্তা কোম্পানিগুলোকে আইনের আওতায় আনতে সরকারগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘আফ্রিকার সাম্প্রতিক ঘটনা একটা বিষয় পরিষ্কার করেছে যে, মারসেনারিদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাগুলো এখনও একটি চলমান ইস্যু। ’
এই বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধাদের নতুন নতুন এবং অভিনব উপায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্যাটেল জানান, ২০১০ সালে নির্বাচনে পরাজয়ের পর জোরপূর্বক স্বপদে বহাল থাকার জন্য আইভরি কোস্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট লরা গিবাগো সাড়ে ৪ হাজার লাইবেরীয় ভাড়াটে যোদ্ধা ভাড়া করেছিলেন। এর পক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণও তাদের কাছে রয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া সশস্ত্র বিক্ষোভ ঠেকাতে লিবিয়ার গাদ্দাফি সরকার প্রতিবেশী আফ্রিকান দেশ এবং পূর্ব ইউরোপের দেশড়গুলো থেকে বহুসংখ্যক ভাড়াটে সৈনিক নিয়োগ দিয়েছিল বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মারসেনারি ব্যবসা বাড়ছে। এই বাণিজ্য কখনও জাতীয় এবং এমনকি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠে। এদের কারণে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার অধিকার এবং মানবাধিকার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।
ভাড়াটে সৈনিকেরা ভয়াবহ রকমের মানবাধিকার লংঘন করছে উল্লেখ করে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ দলটি।
মারসেনারি নিযোগ, ব্যবহার, অর্থায়ন এবং প্রশিক্ষণের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক সনদ রয়েছে। জাতিসংঘের সদস্যদেশ গুলোর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০টি দেশ এই সনদের স্বাক্ষর করেছে। অন্য দেশগুলোকেও এই সনদে অনুসমর্থন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলটি।
তারা জানান, বিভিন্ন দেশের সরকার ছাড়াও বেসরকারি সংগঠন, ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রও মারসেনারি কোম্পানিগুলোর সেবা নিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১১