ঢাকা: জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল উল্লেখ করে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ। এ সময় জাতীয় পার্টির দুই সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এবং রশিউর রহমান রাঙ্গা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দাঁড়িয়ে যান।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সদস্য মোতাহার হোসেন নিজের জনপ্রিয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, ১৪ সালের নির্বাচনে এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির সদস্যরা আপত্তি জানান এবং হইচই করেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
মোতাহার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আমার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। আমার বিরুদ্ধে যারা নির্বাচনে দাঁড়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এমনকি এরশাদ সাহেবেও আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তার জামানত বাজেয়াত্ত হয়েছিল।
মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এরশাদ সাহেব ১৪ সালে নির্বাচনে দাঁড়াননি, এসব মিথ্যা কথা। এ সব মিথ্যা কথা। এ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হবে, তা না হলে রংপুরে খবর আছে।
এরপর জাতীয় পার্টির চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা দাঁড়িয়ে যান এবং প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তিনি বলেন, এ বক্তব্যের পর আমাদের কথা বলতে না দিলে প্রয়োজনে আমরা বেরিয়ে যাব। এ সময় আওয়ামী লীগের সদস্যরাও জাতীয় পার্টির সদস্যদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এবং দুই দলের সদস্যরা হৈচৈ করতে থাকেন। তখনও মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের নির্ধারিত সময় শেষ হয়নি, তিনি দাঁড়িয়েই থাকেন।
এ অবস্থায় ডেপুটি স্পিকার পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ ও মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বার বার বসতে বলেন। এর মধ্যেই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন কক্ষে এসে আসন গ্রহণ করেন। স্পিকার বলেন, একটা ডেকোরাম আছে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা চলছে। যদি কোনো বক্তব্যে কারো কোনো আপত্তি থাকে সেটা তাকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলার জন্য হাত তুলতে হবে। যদি আমরা মনে করি বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ আছে তাহলে দেওয়া হবে। আগে এজেন্ডা অনুযায়ী চলতে হবে। কী বিষয়ে আপত্তি আছে পরে দেখতে হবে। এর পর স্পিকার মোতাহার হোসেনকে তার বক্তব্যের বাকি অংশ বলার সুযোগ দেন।
মোতাহার হোসেন তার বক্তব্যে আরও বলেন, আমি ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে বিজয়ী হয়েছি। এরপর ১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনে আমার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। আগের দিন আমি ২৭০০ ভোটে বিজয়ী হই, পরের দিন আমাকে ২২০০ ভোটে পরাজিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিমানে একদিন যাওয়ার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে এরশাদ সাহেব আমাকে বলেছিলেন, আপনি আমার জামানত বাজেয়াপ্ত করলেন। আপনার জনপ্রিয়তা আছে বটে।
মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গাকে স্পিকার পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ দেন। তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব আমাকে লামনিরহাট-১ আসনে তার মনোনয়ন জমা দিতে বলেছিলেন, আমি জমা দিয়েছিলাম। এরশাদ সাহেব ২০১৪ সালে নির্বাচন করতে চাননি। তাকে নিয়ে এইভাবে টানাহেঁচড়া করা আমাদের কাছে দুঃখজনক।
এর পর জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদকে স্পিকার কথা বলার সুযোগ দিলে তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব এই সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন, এখানে বসতেন। মোতাহার সাহেবের এভাবে তাকে নিয়ে কথা বলা উচিত হয়নি। তিনি জেলে থেকে রংপুরে ৫টি আসনে নির্বাচন করে সব কয়টিতে জয়লাভ করেছেন, যদি ২২টি আসন দিত ২২টিতেই জয় লাভ করতেন। একবার নয়, দুই দুই বার কারাগার থেকে ৫টি আসনে জয় লাভ করেছেন। তিনি (মোতাহার হোসেন) এত বড় বীরবিক্রম হয়ে গেলো যে, এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেলো! এরশাদ সাহেব দাঁড়ায় নাই। আমাকে দিয়ে প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছিল, আবার আমি দাঁড়াইছি। আর দাঁড়াইনি ১৪ সালের নির্বাচনে। আমরা না দাঁড়ালে এই সংসদ থাকে না। এরশাদ সাহেব নির্বাচন করেননি, জোর করে একটা জায়গায় দাঁড়াইয়া, ভোট চাইতে যান নাই, তিনি তখন সিএমএইচে ভর্তি। রংপুরে এমন কোনো সন্তান জন্ম হয় নাই যে, এরশাদ সাহেবকে হারায়। এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হবে, তা না হলে রংপুরে অসুবিধা হবে।
এরপর স্পিকার বলেন, যদি তথ্যগত কোনো ভুল থাকে তবে তা বিশ্লেষণ করে প্রত্যাহার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
এসকে/এমজেএফ