ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয়ের প্রলোভনে কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ৬

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয়ের প্রলোভনে কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা: ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রিমিয়াম সফটওয়্যার দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছয় প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইং) ওয়াহিদা পারভীন বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

 

তিনি জানান, মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানাধীন ০৬ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

গ্রেপ্তাররা হলেন-শামীম আহম্মেদ (৩২), জাহিদুল ইসলাম (২৪), মাহিদুল হক ওরফে মাহাদী (৩০), মো. আশরাফুল ইসলাম (২৬), এহসান মাশফী (২৪) ও রনি সরদার (২৮)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি এসএসডি কার্ড, চারটি হার্ডডিস্ক, চারটি ট্যাব ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের খুব জনপ্রিয় একটি পেশা। নিজের সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট বা মার্কেট প্লেসে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন অনেকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কোর্স করানোর আড়ালে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান আপস্পট অ্যাকাডেমি, প্রতিষ্ঠানটির ফেইসবুক পেজের মাধ্যমে ঘরে বসে প্রথম দিন থেকেই  দৈনিক ১০ থেকে ৪০ ডলার আয় করার প্রলোভন দেখিয়ে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন ফেইক ভিডিও রিভিউ ও পোস্ট করা হয়।  

বিজ্ঞাপনে তারা প্রচার করে সিপিএ ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সের জন্য তারা প্রতি গ্রুপে ৩০০ জন করে লোক নেবে এবং এই কোর্সটি অনলাইনে সম্পূর্ণ ফ্রিতে করাবে। ওই বিজ্ঞাপনে কোর্সটি করার জন্য কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে সেই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর নির্ধারিত সময়ে তাদের প্রেরিত জুম লিংকের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা হয়। ক্লাসে তারা অল্প সময়েই সিপিএ মার্কেটিং-এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা ইনকাম করার বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফারের বিষয়ে বলতে থাকে। পরবর্তীতে সিপিএ মার্কেটিং-এর জন্য বিভিন্ন প্রিমিয়াম রাশিয়ান সফটওয়্যার টুলস প্লাগইন করার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে চাওয়া হয় এবং এই টাকা পরিশোধ করলে তাদের ক্লাসে এনরোল করা হবে বলা হয়। আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থীরা টাকা পরিশোধ করলে তাদের সিপিএ মার্কেটিং-এর ওপর দায়সারাভাবে কিছু রেকর্ডেড ও কিছু লাইভ ক্লাস করানো হয়।  

তাছাড়া যেসব প্রিমিয়াম টুলসের কথা বলে তারা বিকাশে টাকা নেয় সেগুলো দেওয়া হয় না। প্রিমিয়াম সফটওয়্যার টুলসের নামে তারা কিছু ফ্রি সফটওয়্যার সরবরাহ করে, যা দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত আয় করতে সক্ষম হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু ভুক্তভোগী তাদের মাধ্যমে অনলাইনে কিছু ডলার আয় করতে পারলেও ওয়েবসাইট আপডেটের কথা বলে অর্জিত ডলার কেটে রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী দুই বছরে আপস্পট অ্যাকাডেমি সিপিএ মার্কেটিং-এর ওপর এভাবে ১৫৬টি ব্যাচের ট্রেনিং দিয়েছে যার প্রতিটিতে প্রায় ৩০০ জন করে অংশগ্রহণকারী ছিল।  

তিনি জানান, এভাবে প্রতারণামূলকভাবে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে তারা কোটি কোটি টাকা আয় করলেও প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের দেওয়া প্রশিক্ষণ থেকে তেমন কিছুই আয় করতে পারেননি। এছাড়া প্রিমিয়াম টুলস দেওয়ার নামে আড়াই হাজার টাকার অফারের মাঝে কেউ প্রথমে পুরো টাকা না দিয়ে আংশিক পেমেন্ট করলে তাকে অনলাইন ক্লাস থেকে ব্লক করে দেওয়া হয় এবং সেই প্রদত্ত টাকা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর ফেরত দেওয়া হওয়া না। এর মাধ্যমেও তারা হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।  

ভুক্তভোগীরা জানান, কোর্স সমাপ্ত হওয়ার পর সিপিএ মার্কেটিং-এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করার কথা থাকলেও আপস্পট অ্যাকাডেমি থেকে পরে তারা কোনো ধরনের সেবা পান না। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা মেসেজ বা হটলাইনে আপস্পট অ্যাকাডেমির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ধরনের সাড়া পান না। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে ব্লক করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ফ্রিলান্সিং-এর কোর্স পরিচালনার আড়ালে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো প্রিমিয়াম সফটওয়্যার দেওয়ার কথা বলে অংশগ্রহণকারীদের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া।  

আপস্পট অ্যাকাডেমির সিপিএ মার্কেটিং কোর্সের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভোগীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে যার সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজারের ওপরে বলেও জানান তিনি।  

ভুক্তভোগী মো রাহিম মণ্ডল Inform ATU অ্যাপের মাধ্যমে এ ধরনের একটি অভিযোগ করলে অভিযোগ প্রাপ্তির পর এটিইউ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আশুলিয়া থানার মামলা (নং- ৪৪) দায়ের করা হয়। আশুলিয়া থানা জানানোর পর এটিইউ নিজস্ব নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪
এসজেএ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।