ঢাকা, বুধবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৮ মে ২০২৫, ০০ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

খুলনার আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘সঙ্গী’ তন্দ্রা গ্রেপ্তার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:১৭, মে ২৬, ২০২৫
খুলনার আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘সঙ্গী’ তন্দ্রা গ্রেপ্তার যুব মহিলা লীগের নেত্রী নাসরিন ইসলাম তন্দ্রা

খুলনা: ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের নেত্রী নাসরিন ইসলাম তন্দ্রা ওরফে নাসরিন পারভেজ তন্দ্রা গ্রেপ্তার হয়েছেন। সোমবার (২৬ মে) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা শাখার তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

তন্দ্রা মালয়েশিয়া থেকে বিমানযোগে ঢাকায় অবতরণ করেছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেএমপি গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি বিমানবন্দর থানাকে জানালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, আগামী বুধবার (২৮ মে) চট্টগ্রাম থেকে ইটালির ভিসা সংগ্রহ করার কথা ছিল তন্দ্রার। গ্রেপ্তারের পর তাকে খুলনায় আনার প্রস্তুতি চলছে।

বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, নাসরিন পারভেজ তন্দ্রা এক সময়ের সাধারণ এনজিও কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সংস্পর্শে এসে অল্প দিনেই কোটি টাকার মালিক বনে যান। এক সময় খুব কষ্টে দিনযাপন করতেন, প্রথম স্বামীর ঘরে দুই মেয়েসহ মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন। পরে প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে এনজিওতে কাজ শুরু করেন, কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তেমন ভালো চাকরি জোটেনি। দ্বিতীয় বিয়েও বেশি দিন টেকেনি। এরপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আরাম-আয়েশের লোভে তিনি বেছে নেন অনৈতিক পথ।

তার রূপ-লাবণ্যে মোহিত হয়ে পড়েন খুলনার শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বড়, ছোট সব স্তরের নেতাদের ‘সঙ্গী’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তন্দ্রা চেষ্টা করেছিলেন খুলনার যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী হওয়ার। কিন্তু সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। তার বিতর্কিত আচরণে খুলনার অনেকেই ভুক্তভোগী। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তন্দ্রা খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে জমি কিনেছেন। খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধীন বয়রায় তিনি নির্মাণ করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। এছাড়া রায়ের মহলে রয়েছে কোটি টাকার বেশ কয়েকটি প্লট এবং রয়েছে তিনটি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।

সূত্র মতে, বিগত ১৫ বছরে তন্দ্রা খুলনার আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রায় ৫০ জন প্রভাবশালীকে নিজের বশে এনেছিলেন। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য খুলনার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন রঙমহল। অর্থের লোভ দেখিয়ে বা জোর করে তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতেন তিনি। খুলনার রাজনীতিবিদ ও বিত্তশালীরা তন্দ্রার রঙমহলে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

হাইপ্রোফাইলদের জন্য তন্দ্রা দেশের নামিদামি পর্যটন কেন্দ্রের রিসোর্ট ভাড়া করে মনোরঞ্জনের আয়োজন করতেন। সেখানে শো-বিজসহ বিভিন্ন জনরার মডেলদের সরবরাহ করতেন, এমন অভিযোগ রয়েছে। এর বিনিময়ে নেতাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, সম্পত্তি, ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব নিতেন তিনি। পদ, পদবি পাওয়ার লোভ দেখিয়ে বেশ কয়েকজন নারীকে দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডও করাতেন তন্দ্রা। নিজেও ‘বিশেষ কয়েকজনের’ মনোরঞ্জন করতেন।

তন্দ্রার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার। তিনি জানান, কেএমপি গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি খুলনা সদর থানার সন্দেহভাজন আসামি।

খুলনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি তৈমুর ইসলাম জানান, গোপন সংবাদে জানা যায় তন্দ্রা মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আসছেন। সে অনুযায়ী বিমানবন্দর থানাকে জানানো হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এমআরএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।