ঢাকা, বুধবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

প্রবল বর্ষণে সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি যশোরে

সরোয়ার হোসেন, ডিস্ট্রক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২৬, জুলাই ১৫, ২০২৫
প্রবল বর্ষণে সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি যশোরে প্রবল বর্ষণে যশোরে শাকসবজি, মরিচসহ ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। অগত্যা পানিবন্দি পটলের ক্ষেতে জাল বেঁধে মাছ ধরছেন একজন কৃষক। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন থেকে ছবিগুলো তোলা

যশোর: টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। পানি জমে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে ধান, সবজিসহ ফসলের ক্ষেত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্ষায় আক্রান্ত ফসলি ক্ষেতের পরিমাণ তিন হাজার একশ’ ৯১ হেক্টর।

আক্রান্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে শাস-সবজি, রোপা আউশ, রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন, পাট এবং মরিচ। দেশে সবজি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় জোন যশোরের সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর, কাশিমপুর ইউনিয়ন এবং চৌগাছা উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ সবথেকে বেশি।

এসব বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেছেন, আমাদের কৃষক যে কোনো প্রতিকূলতা জয় করে সামনে এগিয়ে যায়। এবারও তারা নতুনভাবে সবকিছু সামলে নিতে পারবে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৬০ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ধান, সবজিসহ নানা ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে রোপা আউশ ১৫৫১০ হেক্টর, রোপা আমন ৬৬৫ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ছয় হাজার ৯৪৫ হেক্টর, পাট ২৪ হাজার ৩৪০ হেক্টর, মরিচ ৪৬০ হেক্টর এবং শাকসবজি ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়।

কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ২৪৫ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৫৯০ হেক্টর জমির রোপা আমনের বীজতলা, ৬২৫ হেক্টর জমির পাট, ১২০ হেক্টর জমির মরিচ এবং ৫৬১ হেক্টর জমির শাকসবজি।

সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর এবং কাশিমপুর ইউনিয়নের মাঠের পর মাঠে নানা ধরনের সবজি চাষ করেছিলেন কৃষক। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে পুইশাক, বরবটি, পটল, উচ্চে, ধেড়স, বেগুন, কচুরমুখি। অনেকে আগাম পাতাকপিরও চাষ করেছেন। চুড়ামনকাটির আব্দুলপুরে দেশের বৃহত্তম সবজি বিজ উৎপাদন জোনে এবারও আগাম পাতাকপিসহ অন্যান্য সবজির চারা রোপণ করেছিলেন কৃষক। অনেক জমি চারা উৎপাদনের জন্যও প্রস্তুত করা হচ্ছিল। কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে এসব কিছুই পানির নিচে চলে গেছে।  

এসব এলাকার কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে অধিকাংশ সবজি ও সবজি চারার ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানির নিচে চলে গেছে রোপা আমন, রোপা আউশ ও রোপা আমনের বিজতলাও। ফলে কৃষকরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে রয়েছেন। বিশেষ করে সবজি পাওয়ার আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন তারা।  

তাদের আশংকা রোদ ওঠার সাথে সাথেই সকল সবজি মাঠেই মারা যাবে। যাও কিছু অবশিষ্ট থাকবে তারও ফলন ভালো হবে না। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে।

যশোর জেলার অন্যতম বৃহত্তম এড়লের বিল দেখে বোঝার উপায় নেই এটা আদতে বিল না সাগর। সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ও দেয়াড়া ইউনিয়ন এবং চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা, পাশাপোল ও সিংহঝুলি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এড়োলের বিলে এবারও হাজার হাজার বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন কৃষক। তার সবই বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেছে।  

চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ও ফুলসারা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বলিদাপাড়া বিল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। গত বছরও এই বিল থেকে ইরি ও আমন ধান ঘরে ওঠাতে পারেননি কৃষক। এরমধ্যে পানিতে তলিয়ে ছিল আমন ধান এবং শিলা বৃষ্টিতে বিনষ্ট হয়েছিল ইরি। এবারের বৃষ্টিতে আউশ, আমন পানির নিচে চলে যাওয়ায় একই ধরনের শংকার মধ্যে রয়েছেন কৃষক।

সিংহঝুলি ইউনিয়নের তৌফিকুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন কৃষক বাংলানিউজকে বলেছেন, অবস্থা খুব খারাপ। নিচু জমির ধান সব পানির নিচে চলে গেছে। অধিকাংশ বিজতলা তলিয়ে গেছে। উপজেলার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের বাওড়ের ধার দিয়ে যেসব বিজতলা ছিল তার সবই পানির নিচে চলে গেছে।

এসব কৃষক বলেন, এখন ধান রোপণের সময়। এরমক বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে তা হয়তো আর সম্ভব হবে না। তবে, সকল শংকার মধ্যেই ক্ষতির শিকার কৃষক নতুন করে বিজতলা তৈরির জন্য ধানবিজ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন বলে জানান তারা।  

এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর প্রথম দিন থেকেই যশোরে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিছুদিন বিরতি দিয়ে আষাঢ় মাসজুড়েই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে শেষের কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ছিল প্রবল। যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস সর্বশেষ তিন দিনের বৃষ্টিপাতের যে তথ্য দিয়েছে তাতে সবচেয়ে বেশি ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সোমবার (১৪ জুলাই)। এছাড়া, রোববার (১৩ জুলাই) ৬৭ মিলিমিটার এবং মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আরও প্রায় চারদিন দেশের আরো কয়েকটি এলাকার মতো যশোরেও প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি, পূর্বাভাস সঠিক হয় তাহলে ফসল ছাড়াও ভেসে যেতে পারে মাছের ঘের। এমনকী জনপদ প্লাবিত হয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়ার শংকা রয়েছে। সেইসাথে সবজির সংকট তৈরি হয়ে বাড়তে পারে দামও। যার শিকার হবেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেছেন, নিতিসহ তার দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তারা যশোর সদর উপজেলার আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বুধবার (১৬ জুলাই) থেকে অন্যান্য উপজেলাতেও খোঁজখবর নেওয়ার কাজ শুরু হবে।

ক্ষতির বিষয়টি কৃষক যাতে সামলে উঠতে পারে সে ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সম্ভাব্য সকল সহায়তা এবং পরামর্শ প্রদানেরও আশ্বাস দেন তিনি।  

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।