ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই, তলিয়ে গেছে ৫ হাজার বিঘা বাদাম ক্ষেত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:১৯, জুলাই ২৬, ২০২৫
ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই, তলিয়ে গেছে ৫ হাজার বিঘা বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি

ফরিদপুর: পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই ফরিদপুরে। উজানের ভারী বর্ষণে পানি বাড়তে থাকায় দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা।

ইতোমধ্যে জেলার চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ফরিদপুর সদর উপজেলায় কমপক্ষে ৫ হাজার বিঘা বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারায় বাদাম চাষিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চাষিদের দাবি, টানা ১০-১২ দিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতের প্রায় অর্ধেক বাদাম পচে গেছে। চরের কৃষক ইয়াকুব, মনির, মোহন ও শমসের জানান, বাদামের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় জ্বালানি সংকটেও পড়েছেন তারা। কেউ ফসল রক্ষায়, কেউ গো-খাদ্য মজুদে ব্যস্ত। আবার অনেকে ক্ষেত বাঁচাতে কামলা ধরে আনতেও হিমশিম খাচ্ছেন।

পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে ঢেঁড়স, লাল শাক, ডাটা, কুমড়া, কলমি শাকসহ নানা ধরনের সবজির ক্ষেত। গরু-বাছুর ও ঘোড়ার খাবার হিসেবে চাষ করা ঘাসের প্রায় ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে পানিতে ডুবে গেছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে ফরিদপুর সদরের গোলডাঙ্গী এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, চারটি খেয়াঘাটের প্রায় ৪৫ শতাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। অগ্রভাগে তলিয়ে রয়েছে ৫০০ বিঘা পরিমাণ একটি বিশাল ফসলি চর। পদ্মার পানি ক্রমাগত বাড়ছে, ফলে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে শনিবার সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ফরিদপুর নদীবন্দর ঘাট পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার একেবারে নিচে অবস্থান করছিল।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিচু চরাঞ্চল প্রতিদিন নতুন করে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাদাম ক্ষেত, গো-খাদ্যের ঘাসের ক্ষেত, শাকসবজি এবং কৃষকের চলাচলের পথ। চরাঞ্চলে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের পথ অচল হয়ে পড়েছে। গৃহস্থদের গরু-ছাগলের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে।

ফরিদপুর নৌবন্দর ঘাটের ঘাট সর্দার মো. শাহিন বলেন, যদি পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে, তবে চরভদ্রাসনের হরিরামপুর, আকটেরচর, সদরপুরের শয়তানখালী, মুন্সির চর, আকোট এলাকা, ভাঙ্গা উপজেলার চান্দা এলাকা, কালামৃধা আড়িয়াল খাঁ চর, চরভদ্রাসনের হাজীগঞ্জ, ফরিদপুর সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ১, ২, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মদনখালী, ধলারমোড়, সিঅ্যান্ডবি ঘাট, ভূঁইয়া বাড়িরঘাট—এই সব অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে পদ্মাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। দেখা দেবে খাদ্য ও গো-খাদ্যের চরম সংকট।

তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বলেন, তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে শনিবার সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে।

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, উজানের ধেয়ে আসা পানিই আমাদের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের জন্য ভয়াবহ হুমকি।

এদিকে ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, বন্যা একটি জাতীয় সমস্যা। প্রকৃতি অনুকূলে থাকা বা না থাকা নির্ভর করছে উজানের পানির গতিপ্রবাহের ওপর।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।