রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা বাঁধটিতে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোপূর্বে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় নতুন করে সেতু রক্ষা বেড়িবাঁধে তীব্র ভাঙন শুরু হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হওয়া তিস্তার দ্বিতীয় সংযোগ সেতুটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার সঙ্গে গঙ্গাচড়া লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুরকে সড়কপথে যুক্ত করেছে। সেতুটি ৮৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৯.৬ মিটার প্রস্থ, এতে ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যান রয়েছে।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের ব্লকের নিচ থেকে তীব্র স্রোতে মাটি সরে গিয়ে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এতে ৯০০ মিটার বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার জায়গার ব্লক ধসে গিয়ে স্থানটিতে প্রায় ৭০ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মহিপুর সেতু, লালমনিরহাট-রংপুর অঞ্চলের যোগাযোগ সড়কসহ ওই এলাকার প্রায় দেড় হাজার পরিবার।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আগের দুই বারের বন্যায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেনি।
মহিপুরের চর ইচলীর কৃষক আব্দুস সামাদ ও দাজুল মিয়া বলেন, এই বাঁধ দ্রুত ঠিক করা দরকার। না হলে সেতু ভেঙে যেতে পারে। সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতা হবে, জমি বালুচরে ঢেকে যাবে, চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে।
উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, গত দুইবারের বন্যায় বাঁধের ক্ষতি হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো সংস্কার কাজ করেনি। এবারের বর্ষায় পানি বাড়তেই একের পর এক সিসি ব্লক তলিয়ে যাচ্ছে। নিচে গভীর গর্ত তৈরি হয়ে ভাঙন আরও ভয়াবহ হচ্ছে।
স্থানীয় লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী সাংবাদিকদের জানান, উজানের ঢলে বাঁধের উল্টো দিকে চর পরায় নদীর পানি সরাসরি বাঁধে আঘাত হানছে। এতে সড়ক ও জনবসতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, মহিপুরে তিস্তা সেতুর পশ্চিম অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বাঁধটি সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এটির রক্ষণাবেক্ষণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে নেই। যে কারণে তারা এটির সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এদিকে এলজিইডি রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বলেন, আমরা খবর নিয়েছি সকাল থেকে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে সেতু রক্ষা বাঁধটিতে। সেখানে আমাদের একটি টিম কাজ করছে। তবে পানি বেশি থাকায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। আশা করছি পানি কমে গেলে দ্রুত বাঁধটি মেরামত করা যাবে।
আরএ