ঢাকা, বুধবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

সাবেক এমপি ও তার চাচার নামে দুদকের মামলা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪০, অক্টোবর ১৫, ২০২৫
সাবেক এমপি ও তার চাচার নামে দুদকের মামলা  চাচা, ভাতিজা

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন ভাতিজা আর চাচা ছিলেন দিনাজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এই দুইজনের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত প্রায় ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুদক দিনাজপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-সহকারী আলম মিয়া বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  
 
জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত উৎস দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর-ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর-নবাবগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের অর্জনপূর্বক ভোগদখলের টাকার পরিমাণ ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৩ টাকা। আর তার চাচা দিনাজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেনের জ্ঞাত আয়ের বর্হিভূত টাকার পরিমাণ ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৩৫ লাখ ৬২৫ টাকা।  

দুটি মামলাতে বাদী তার আর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎস বর্হিভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।  

সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের অনুসন্ধানে শিবলী সাদিকের নামে স্থাবর সম্পদ হিসেবে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার আফতাবগঞ্জে একটি ৬ তলা বাড়ি, ঢাকার ধানমন্ডিতে পার্কিংসহ ২০২০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, স্বপ্নপুরী বিনোদন পার্কের ৫০ শতাংশ মালিকানা, কক্সবাজারের ঝিলংজায় ৭৭০ বর্গফুট ও ৩৮৫ বর্গফুটের দুইটি ফ্ল্যাট, দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর থানার বিভিন্ন মৌজায় ৪৫.৫২ একর জমিসহ মোট ১০ কোটি ২২ লাখ ৭৮ হাজার ৬ টাকার সম্পদ এবং অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ব্যবসার মূলধন, দুইটি জিপ গাড়ি, আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও ব্যাংক স্থিতিসহ মোট ৮ কোটি ৯১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৮ টাকার সম্পদসহ সর্বমোট ১৯ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ৩০৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য/রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়। অন্যদিকে তার ঋণ রয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ঋণ বাদে তার নামে অর্জিত নীট সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি ৯৪ লাখ ২২ হাজার ৩০৪ টাকা।  

দুদক অনুসন্ধানকালে পেয়েছে, শিবলী সাদিকের গ্রহণযোগ্য আয় ১০ কোটি ৮০ লাখ ০২ হাজার ৭০৮ টাকা, এর বিপরীতে তার সম্পদ রয়েছে ১৫ কোটি ৯৪ লাখ ২২ হাজার ৩০৪ টাকা। অর্থাৎ তার অতিরিক্ত টাকা রয়েছে ৫ কোটি ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৬ টাকা। আর তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া গেছে ২ কোটি ৮২ লাখ ১৪ হাজার ৩৭ টাকা। অর্থাৎ তার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৩ টাকা।  

শিবলী সাদিকের চাচা ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেলওয়ার হোসেনের নামে স্থাবর সম্পদ হিসেবে দিনাজপুর জেলার বালুবাড়িতে একটি ০৫ তলা বাড়ি, ঢাকার ধানমন্ডিতে কার পার্কিংসহ ২০৭০ ও ২৭৪৬ বর্গফুটের দুইটি ফ্ল্যাট, ঢাকার মোহাম্মদপুরে কার পার্কিংসহ ১৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, স্বপ্নপুরী বিনোদন পার্কের ৫০ শতাংশ মালিকানা, দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর থানার বিভিন্ন মৌজায় নিজ ও ৩ (তিন) সন্তানের নামে ২৮.৫০ একর জমিসহ মোট ৭ কোটি ৮৯ লাখ ৫২ হাজার ১৪৫ টাকার সম্পদ এবং অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ব্যবসার মূলধন, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, স্বর্ণালঙ্কার ও ব্যাংক স্থিতিসহ মোট ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯৯ টাকার সম্পদসহ সর্বমোট ১৪ কোটি ১৮ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে তার ঋণ রয়েছে ৩৬ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৭ টাকা। ঋণ বাদে তার নামে অর্জিত নীট সম্পদের মূল্য ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৭ টাকা।

দুদক অনুসন্ধানকালে দেলওয়ার হোসেনের গ্রহণযোগ্য আয় ৮ কোটি ৭৯ লাখ ৮ হাজার ৯৩৬ টাকা পেলেও তার নীট সম্পদের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৭ টাকা। অর্থাৎ তিনি অতিরিক্ত আয় করেছে ৫ কোটি ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫১ টাকা আর তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় রয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৪ টাকা। অর্থাৎ তার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের পরিমাণ ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকা।  

এমপি ভাতিজা ও চেয়ারম্যান চাচার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে বলেও মামলাতে বলা হয়।  

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক পলাতক রয়েছেন, আর তার চাচা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন জেলহাজতে রয়েছেন।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।