ঢাকা, শুক্রবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

একাডেমিক জগতে কঠিন প্রতিযোগিতা, দরকার পারস্পরিক সহযোগিতা: ঢাবি উপাচার্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩০, আগস্ট ২১, ২০২৫
একাডেমিক জগতে কঠিন প্রতিযোগিতা, দরকার পারস্পরিক সহযোগিতা: ঢাবি উপাচার্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাবি উপাচার্য

চট্টগ্রাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই; পার্থক্য কেবল পরিচালন ব্যবস্থায়। তাই আমাদের উচিত পরস্পরের হাত ধরে এগিয়ে চলা।

একাডেমিক জগৎ এখন কঠিন প্রতিযোগিতায় রয়েছে। তাই পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক খুব দরকার।
 

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) কুমিরার স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত শরৎকালীন সেমিস্টার-২০২৫-এর অনার্স প্রোগ্রামের নবাগত ছাত্রদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

আইআইইউসির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান এবং বিওটি সদস্য প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মাঈনুদ্দীন খন্দকার। স্বাগত বক্তব্য দেন আইআইইউসির ট্রেজারার ও ওরিয়েন্টেশেন প্রোগ্রাম অর্গনাইজিং কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। বক্তব্য দেন আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মাইমুল আহসান খান, আইআইইউসির রেজিস্ট্রার কর্নেল মোহাম্মদ কাশেম পিএসসি (অব.), ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শেখ মো. গোলাম মোস্তফা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা মনির চৌধুরী।  

প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানার্জনের দ্বার অবারিত। দরকার সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার। এখানে নিয়মিত সেমিনার ও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। মনে হতে পারে, কোনো সেমিনার সরাসরি কারো সাথে সম্পর্কিত নয়, কিন্তু তবুও তাতে অংশ নেওয়া জরুরি। কারণ আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব না হলেও, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় তৈরি হবে যা ভবিষ্যতের জন্য অমূল্য। মানুষের জীবনে তীব্র স্রোতের মতো ঢেউয়ের পর ঢেউ আসে। সাগরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে না গিয়ে আমাদের উচিত সেই স্রোতকে কাজে লাগানো। সেই ঢেউকে কাজে লাগালে জাহাজের মতো ভাসা সম্ভব হবে, নয়তো ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যেতে হবে।  

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এখানে নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। এখন থেকে কেউ আর আপনার হয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না। আপনার সামনে একাধিক পথ খোলা থাকবে; কোন পথে যাবেন, সেই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। সাগরের সামনে দাঁড়ালে ঢেউ যেমন ডুবিয়েও দিতে পারে, তেমনি সঠিকভাবে কাজে লাগালে সেই ঢেউ-ই জাহাজকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে। ভাষা শিক্ষার ওপর আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা আরবি, ইংরেজি বা অন্য যেকোনো ভাষাই হতে পারে। পাশাপাশি, সঠিকভাবে সিভি লেখার দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই অর্জন করতে হবে। অনেকেই সিভি লেখাকে সাধারণ মনে করেন, কিন্তু চাকরি ও ক্যারিয়ারে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে থেকেই নেটওয়ার্ক তৈরি শুরু করতে হবে। তবে নেটওয়ার্কিং মানে শুধুই পরিচিতদের কাছে চাকরি চাওয়া নয়। এর অর্থ হচ্ছে, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একে অপরের উন্নয়নে সহায়ক হওয়া। মানুষ হওয়ার আনন্দই হলো, আমরা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারি।  

প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আমার এখানে আসার দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, আপনাদের সঙ্গে দেখা করা এবং দ্বিতীয়ত, একটি প্রতিষ্ঠানকে ছোট থেকে বড় হতে দেখা। আনন্দের বিষয় হলো, আজ এই প্রতিষ্ঠানটি নিজের শক্তিতে দাঁড়িয়ে আছে, আর কোনো ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই বাংলাদেশ আমাদের গর্ব। কিন্তু আমাদের দেশ যে কাঙ্ক্ষিত মানের নেতৃত্ব পাওয়ার কথা ছিল তা পায়নি। দেশের অঢেল সম্পদ কাজে লাগানোর মতো নেতৃত্ব পাওয়া যায়নি। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দেশ। আমরা বারবার লজ্জিত হয়েছি। চব্বিশের জুলাই বিপ্লব আমাদের আশা জাগিয়েছে একটি সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব পাওয়ার।  

তিনি ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, একাডেমিক ক্যারিয়ারের সাথে ওহির জ্ঞানের সমন্বয় করতে হবে। তা না হলে প্রকৃত জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। ইতিবাচকতা ও মানবিকতা থাকতে হবে। ইসলাম আমাদেরকে উদার হতে শিখিয়েছে। তার বড় প্রমাণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অমুসলিম শিক্ষার্থীর অধ্যয়ন করা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক আহমদ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করার স্বপ্ন দেখে। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল ভিলেজের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।  

সভাপতির বক্তব্যে আইআইইউসির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবন। এর অপব্যবহার করা যাবে না। এখন এগিয়ে যাবার সময়। সব বাধা পেরিয়ে জ্ঞানার্জন করতে হবে। জ্ঞান কেন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারছে না, তা ভাবতে হবে। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পার্থক্য বুঝতে হবে।  

এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।