জাকার্তা: ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম উপকূলে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ১০৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে পাঁচ শতাধিক লোক নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার নয় জন নাগরিক রয়েছেন বলে জানা গেছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রান্তিক অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানায় হতাহতের সংখ্যা সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।
সুমাত্রার পশ্চিমে মেনতাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে সোমবার রাতে এ ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এতে কয়েকটি দ্বীপের বসতবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ভূমিকম্প আঘাত হানার পর আক্রান্ত অঞ্চলে সুনামি সর্তকতা জারি করা হয়।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার রাতের এ ঘটনায় তিন মিটার উঁচু ঢেউয়ের তোড়ে ১০টি গ্রাম ভেসে গেছে।
সুমাত্রায় অস্ট্রেলিয়ার নৌব্যবসায়ী রিক হ্যালেট বলেন, ‘আমরা প্রথমে নৌকার নিচে খানিক ঝাঁকি অনুভব করি। এর কয়েক মিনিট পর প্রবল গর্জন শুনতে পাই। ’
তিনি বলেন, ‘আমি তখনই ভাবলাম এটা সুনামি। এরপর তাকিয়ে দেখি বিরাট বিরাট সাদা পানির দেওয়াল আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। ’
মেনতাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আইনপ্রণেতা হেনরি দোরি সাতোকো মেট্রো টিভিকে বলেন, ‘ক্রাইসিস সেন্টার থেকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত অন্তত ১০৮ জন নিহত এবং ৫০২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র আগোলো সুপার্তো বলেন, ‘সুনামিতে ১০টি গ্রাম ভেসে গেছে। ’
ইন্দোনেশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলের ভূমিকম্পপ্রবণ ‘আগুনের গোলা’য় অবস্থিত। এর দ্বীপগুলোয় ঘন ঘন ভূমিকম্প আঘাত হানে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পেদাং-এ ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের ঘটনায় ১১ হাজার মানুষ মারা যায়। এর আগে, ২০০৪ সালে ৯ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে সুনামি সৃষ্টি হয় । সেসময় সুনামিতে এক লাখ ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়।
প্রশান্ত অঞ্চলের সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র জানায়, ‘এই ভূমিকম্পের ফলে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সুনামির উৎপত্তি হয়েছে। ’
যুক্তরাষ্ট্রে ভূতাত্তিক জরিপ প্রতিষ্ঠান (ইউএসজিএস) জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪২ মিনিটে ইন্দোনেশিয়ার মেনতাওয়াই অঞ্চলের ২০ দশমিক ৬ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
এর আগে, ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া ও ভূ-পদার্থ বিভাগের প্রধান ফাউজি বলেন, ‘এটা একটি ছোটখাট সুনামিও হতে পারে। আমরা এ মুহূর্তে কোনো আনুষ্ঠানিক খবর পাইনি। ’
এছাড়া, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা অ্যারলাইনো বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, মেনতাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ২৩ জন নিহত ও ১৬৭ জন নিখোঁজ হন। ভূমিকম্পের আঘাতে তিন মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ে এবং দণি পাগাই দ্বীপের ভিতর ৬০০ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে বলেও তিনি জানান।
সার্ফএইড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু জাজ বলেন, ‘নৌকাটি খোঁজার জন্য আমরা নৌকা ও বিমান পাঠিয়েছি। ’
ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সুমাত্রা দ্বীপের ২৪০ কিলোমিটার পশ্চিম এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পেদাগাং থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের মেনতাওয়াই দ্বীপে ।
ইন্দোনেশিয়া ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে অন্যতম। দ্বীপ পরিবেষ্টিত এই দেশটিতে প্রায়ই ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১০