ঢাকা: কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর ডেবাল্টসিভে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারি বাহিনীর যেসকল সদস্য জিম্মি রয়েছেন তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবে।
হাঙ্গেরি সফররত পুতিন উভয়পক্ষই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে বলে তার আশাবাদের কথা জানিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী দিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব নয়। আমি আশা করেছিলাম, ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ তাদের সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। যদি এভাবেই চালাতে থাকে তারা, তাহলে যেসব মানুষ এই যুদ্ধের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছে, আমার আশঙ্কা, তাদের রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, ডেবাল্টসিভের যুদ্ধ অকল্পনীয় বা অনির্ণেয় কিছু ছিল না। মিনস্কে আলোচনার সময়ই আমি সাবধান করেছিলাম।
গত সপ্তাহে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ডেবাল্টসিভসহ পূর্বাঞ্চলে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের খবরের মধ্যেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে সকল পক্ষকেই চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে বলা হয়। রাশিয়ার এই প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীতও হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন যুদ্ধবিরতি ডেবাল্টসিভে কার্যকর হচ্ছে না। শহরটি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেন সরকারি বাহিনী- উভয় পক্ষের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ এই শহরের সঙ্গে বেদখল হয়ে যাওয়া দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রেল যোগাযোগ রয়েছে।
উপরুন্ত ইউক্রেনিয়ান প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো ডেবাল্টসিভে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণকে ‘মারাত্মক’ বলে অভিহিত করেছেন।
সংঘর্ষের খবরের পর জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে ফোনালাপের তার ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে পোরোশেঙ্কো বলেন, আগ্রাসনবাদীদের থামানো বিশ্বের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এর মূল্য রাশিয়াকে দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, পুলিশ ও রেল স্টেশনসহ ডেবাল্টসিভের অন্তত ৮০ শতাংশ এলাকা এখন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে। এমনকি শহরের সেনা সদরদপ্তরও ঘিরে ফেলেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবি অনুসারে, অন্তত ৩০০ সেনা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ডেবাল্টসিভে। ৭২ জন সেনাকে সেখানে বন্দি করা হয়েছে বলে জানায় রাশিয়ান একটি টিভি চ্যানেল।
গত সপ্তাহে মিনস্কে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ডেবাল্টসিভে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। গত রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক শর্তানুযায়ী সোমবারের (১৬ ফেব্রুয়ারি) মাঝে উভয় পক্ষকেই ফ্রন্টলাইন থেকে ভারি অস্ত্র প্রত্যাহার শুরু করার কথা এবং দুই সপ্তাহের মাঝে ৫০-১৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি নিরপেক্ষ এলাকা তৈরি করার কথা। কিন্তু ইউক্রেন বাহিনী কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদী, কোনো পক্ষই প্রাথমিক শর্ত পূরণ করেনি। উপরুন্তু মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে এই এলাকায় প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়।
গত বছরের এপ্রিলে ওই অঞ্চলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫