ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আসিফার বিচারিক কার্যক্রম অন্য রাজ্যে স্থানান্তরের আবেদন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
আসিফার বিচারিক কার্যক্রম অন্য রাজ্যে স্থানান্তরের আবেদন আসিফার স্কেচ

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কাঠুয়া শহরের রাসানা এলাকা থেকে আট বছরের শিশু আসিফা বোনো অপহরণের পর ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম জম্মু থেকে চণ্ডিগড়ের আদালতে স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছেন শিশুটির বাবা। সোমবার (১৬ এপ্রিল) পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে এ আবেদন জানান। 

সোমবার দুপুরে কাঠুয়ার দায়রা জজ আদালতে আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচার শুরু হওয়ার কথা।

আসিফার পরিবারের পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মিরে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে তারা নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় আছেন।

জম্মুর পরিস্থিতি, কাঠুয়ার আইনজীবীদের বিরোধিতা এবং চার্জশিট দায়ের করতে বাধা দেওয়ায় আমরা শঙ্কিত যে বিচারিক কার্যক্রম এখানে শান্তিপূর্ণ হবে না।  

তারা এ মামলা অন্য রাজ্যের আদালতে স্থানান্তরের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান।  

গত ১০ জানুয়ারি রাসানা এলাকা থেকে আসিফাকে অপহরণের পর সপ্তাহখানেক আটকে রেখে ধর্ষণ এবং শেষে হত্যা করা হয়। ১৭ জানুয়ারি রাসানার একটি জঙ্গলে তার মরদেহ পাওয়া যায়। সম্প্রতি ওই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

এ ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, চার পুলিশ কর্মকর্তা ও এক কিশোরসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা সনজি রাম, পুলিশের বিশেষ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া, সুরেন্দ্র বর্মা, আনন্দ দত্ত ও তিলক রাজ, সনজি রামের ভাগনে (ছদ্মনাম রামু, অভিযোগপত্রে বয়স ১৯ বছর বলা হলেও সংবাদমাধ্যম ১৫ বছর দাবি করে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না), তার বন্ধু পারবেশ কুমার (মানু) ও রামের ছেলে বিশাল জঙ্গোত্রা।

পুরো লোমহর্ষক ঘটনার বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, আসিফা বোনো সংখ্যালঘু বাকারওয়াল জাতিগোষ্ঠীর ইউসুফ বাকারওয়ালের মেয়ে। গোষ্ঠীটি কাশ্মীরের পাহাড়ি এলাকায় যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায়। ভেড়া চড়ানো এদের জীবিকা-নির্বাহের উপায়। এই গোষ্ঠীর কিছু লোক রাসানা এলাকায় বসবাস করতে এলে এখানকার প্রভাবশালী সনজি রাম তাদের তাড়াতে উঠে-পড়ে লাগেন। বাকারওয়ালদের বিরুদ্ধে মাদকপাচার, গো-হত্যাসহ বিভিন্ন উসকানি ছড়ালেও পেরে উঠছিলেন না উগ্র মানসিকতার সনজি রাম। শেষমেষ তিনি তার ভাগনের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ বেছে নেন।

অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, বাকারওয়াল গোষ্ঠীকে তাড়াতে সনজি রাম তার ভাগনে রামুকে বলেন ইউসুফের মেয়ে আসিফাকে অপহরণ করতে। তার নির্দেশমতে রামু এই পরিকল্পনা জানায় তার বন্ধু মানুকে। ৯ জানুয়ারি দুই বন্ধু স্থানীয় একটি দোকান থেকে চেতনানাশক ওষুধ কেনে। ১০ জানুয়ারি আসিফা তাদের ভেড়া চরাতে বের হলে তাকে অপহরণ করে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায় রামু ও মানু। এরপর তাকে ধর্ষণ করে রামু। পরে দু’জনে আসিফাকে সনজি রামের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি উপাসনালয়ে তালাবদ্ধ করে রেখে দেয়। ১১ জানুয়ারি আসিফার মা-বাবা মেয়েকে খুঁজতে সনজি রামের কাছে গেলে তিনি তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে খোঁজ নিতে বলেন। একইদিন রামু খবর দেন সনজি রামের ছেলে বিশালকে এবং শিশুটিকে ধর্ষণ করবে কি-না জিজ্ঞেস করে। ১২ জানুয়ারি বিশাল সেখানে গিয়ে রামু-মানুদের সঙ্গে যোগ দেয়।  

এদিকে, পুলিশকে জানিয়ে আসিফার খোঁজ চালাতে থাকে বাকারওয়ালরা। এই প্রেক্ষাপটে সনজি রাম বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এক পুলিশ সদস্যকে হাত করে ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনন্দ দত্তকে দেড় লাখ রুপি ঘুষ দিতে রাজি করায়। ১৩ জানুয়ারি সকালে বিশাল ও তার বাবা সেই উপাসনালয়ে যান, সেখানে যান রামু এবং মানুও। রামু ও বিশাল মিলে ফের ধর্ষণ করে আসিফাকে। সন্ধ্যায় সনজি রাম তার ছেলে-ভাগনেদের বলেন আসিফাকে মেরে ফেলতে। সে কথা মতো, রামু, মানু ও বিশাল তাকে নিয়ে যান একটি কালভার্টে। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সনজির হাত করে নেওয়া সেই পুলিশ কর্মকর্তা দীপক। আবার  মেয়েটিকে ধর্ষণ করে রামু এবং দীপক। এরপর দীপক তার চাদর আসিফার গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। রামু মেয়েটির মাথা পাথর দিয়ে থেতলে দেন। সেখানেই ফেলে রাখা হয় তার মরদেহ।

গত ১৫ জানুয়ারি মেয়েটির মরদেহ নিয়ে ফেলে দেওয়া হয় অদূরের জঙ্গলে। ১৭ জানুয়ারি সেখান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেন স্থানীয়রা, খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৬০ বছর বয়সী সনজি রামই পুরো ঘটনাটির মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী। যে উপাসনালয়ে মেয়েটিকে অপহরণ করে বন্দি রাখা হয় এবং ধর্ষণ করা হয়, সেটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন এই সনজি রামই। আর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল রামু, মানু, বিশাল এবং পুলিশ কর্মকর্তা দীপক।

এ ঘটনার পর থেকে ভারতজুড়ে চলছে তীব্র বিক্ষোভ। রাজনীতিবিদ, ক্রীড়াবিদ, বলিউডের কলাকুশলীসহ সবাই টুইট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।