ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে জমি দখল-কমিটি জালিয়াতির অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:১৫, জুলাই ১৪, ২০২৫
কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে জমি দখল-কমিটি জালিয়াতির অভিযোগ

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের নয়নপুরে প্রতিষ্ঠিত একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি দখল, কমিটি জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।  

২০২৩ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল সিদ্দিকীর মৃত্যুর পর কাদের সিদ্দিকী নিজেকে 'ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটি'-এর স্বঘোষিত সভাপতি ঘোষণা করেন এবং এরপর থেকেই তিনি এসব অপকর্ম শুরু করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটি, কচি-কাঁচা একাডেমি, নয়নপুর এন এস আদর্শ বিদ্যালয় এবং ইকবাল সিদ্দিকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও ইকবাল সিদ্দিকীর পরিবারের সদস্যরা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।

ইকবাল সিদ্দিকীর মেজো ভাই হায়দার সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, ইকবাল সিদ্দিকীর মৃত্যুর মাত্র দু'দিনের মধ্যে কাদের সিদ্দিকী শোকাহত পরিবারের সুযোগ নিয়ে "নিয়ম বহির্ভূতভাবে" নিজেকে সোসাইটির সভাপতি ঘোষণা করেন। এরপরই কাদের সিদ্দিকী এবং তার সহযোগীরা মৃত ইকবাল সিদ্দিকী ও মৃত লক্ষণ দেবনাথের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে, এমনকি জীবিত নির্বাহী সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) একটি কমিটি দাখিল করেন। এই কমিটির সভাপতি হিসেবে কাদের সিদ্দিকীর নাম ছিল। জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় আরজেএসসি দাখিলকৃত কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে।

তবে কমিটি স্থগিত হলেও কাদের সিদ্দিকী অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করা হয়। হায়দার সিদ্দিকী জানান, তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমানে আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো, আরজেএসসির স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কাদের সিদ্দিকীর নিজেকে সোসাইটির সভাপতি দাবি করার কোনো বৈধতা নেই। একইভাবে, তার মনোনীত আব্দুর রহমানও ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের সভাপতি হিসেবে বৈধ নন।  

অভিযোগ করা হয়, আব্দুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি হওয়া সত্ত্বেও কাদের সিদ্দিকী তাকে স্নাতক হিসেবে প্রত্যয়ন দিয়ে কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

এছাড়া, কাদের সিদ্দিকী আরজেএসসির স্থগিতাদেশ গোপন করে গত ৯ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালককে প্রভাবিত করে সোসাইটির সভাপতি হিসেবে একটি চিঠি ইস্যু করান। এমনকি, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ইকবাল সিদ্দিকী স্কুল জেলার ৪র্থ সেরা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মাউশি কাদের সিদ্দিকীর প্রভাবে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু নয় মর্মে চিঠি ইস্যু করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেন, কাদের সিদ্দিকী প্রতিষ্ঠানের টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করছেন, বিধিবহির্ভূতভাবে প্রতিটি সভায় অর্থ গ্রহণ করছেন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার ব্যয় মেটাতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করেছেন। ইতঃপূর্বে কাদের সিদ্দিকী, মিজানুর রহমান ও সিরাজুল হক গং-এর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আব্দুর রহমান ব্যক্তিগত নামে জমি রেজিস্ট্রির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইকবাল সিদ্দিকীর ছোট ভাই মিঠু সিদ্দিকী, ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসমত উল্লাহ, কচি কাঁচা একাডেমির প্রধান শিক্ষক আফরোজা খানমসহ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইএসএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।