পটুয়াখালী: সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র ও ডিজিএফআইসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্টাবলিশমেন্টগুলো এখনো জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সক্রিয় ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে পটুয়াখালী সার্কিট হাউসের সামনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণে এবং বিচার, সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠনের দাবিতে আয়োজিত পদযাত্রা শেষে এক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সরকার হটানো জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম বলেন, অভ্যুত্থান থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিকে আগে একটি দল পাহারা দিত, এখন নতুন আরেকটি দল পাহারা দিচ্ছে। দেশ সংস্কারে সংবিধান সংস্কার জরুরি, কিন্তু মুজিববাদী সংবিধানকে এখন টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে বিএনপি।
বাংলাদেশ পুনর্গঠনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, জেলায় জেলায় যখন (এনসিপি) পদযাত্রা শুরু করেছি, জোয়ারের মত মানুষের ঢল নেমেছে, চারিদিকে যখন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের পদধ্বনি, তখনই আমাদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে নতুন করে ষড়যন্ত্র।
‘সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, ডিজিএফআইসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্টাবলিশমেন্টগুলো এখনো এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সক্রিয় ষড়যন্ত্র করছে। ’
তিনি বলেন, আমরা মাফিয়া ও দুর্নীতিবাজ সিস্টেম পরিবর্তনের প্রয়াস চালাচ্ছি, আর সে পথেই বারবার বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন ঘটানো হলেও দেশে আরেকটি দলের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা বাহাত্তরের সংবিধান রক্ষা ও দুর্নীতিবাজদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি দেশে বিভাজন তৈরি করে চাঁদাবাজদের পাহারাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অভ্যুত্থানকারী তরুণ নেতৃত্ব যেন টিকে না থাকে, সে জন্য বিভিন্ন স্তরে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, মিথ্যা মামলা ও দুর্নীতির অভিযোগে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে জনতাকে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, এই ষড়যন্ত্রের জবাব জনতার সমর্থনই দেবে। জেলাজুড়ে পদযাত্রায় মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসই প্রমাণ করে এনসিপি আজ একটি বিকল্প শক্তি।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, এই বিপ্লবের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াবে, তাদের সঙ্গে কোনো আপস নেই, কোনো ঐক্য নেই।
সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, দেশের প্রকৃত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষায় নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
তারা জানান, এনসিপি কোনো দলের ছায়া নয়, বরং এটি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি।
দলের জেলা শাখার সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম মুসার সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, সাংগঠনিক নেতা আরাফাত হোসেন ও মাহফুজুল হক প্রমুখ।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরে সার্কিট হাউসের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য পদযাত্রা বের হয়। এটি নিউমার্কেট মোড় হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হৃদয় তরুয়া চত্বরে এসে শেষ হয়। পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা. তাসনিম জারাসহ শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
পদযাত্রার এক পর্যায়ে এনসিপি নেতারা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের প্রতি সমবেদনা জানান।
এদিকে কর্মসূচিকে ঘিরে শহরজুড়ে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক, মোড় ও চত্বরগুলো ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও জাতীয় পতাকায় সজ্জিত হয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষে বিকেলে কেন্দ্রীয় নেতারা বরগুনার উদ্দেশে পটুয়াখালী ত্যাগ করেন।
এইচএ/