ঢাকা, শনিবার, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

রাস্তা নয়, যেন কৃষিজমি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৫১, আগস্ট ৯, ২০২৫
রাস্তা নয়, যেন কৃষিজমি! কাঁচা রাস্তার বেহাল দশা

ফরিদপুর: দেখে বোঝার উপায় নেই, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেন ছয় গ্রামের মানুষ। দেখে মনে হবে ধান চাষের জন্য কোনো কৃষক জমি হালচাষ করে রেখেছেন।

কিন্তু, আসলে এটি হালচাষের জমি নয়, বরং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা গ্রামের একটি রাস্তা। এই গ্রামীণ পথ দিয়ে টিটা, টিটা পানাইল, ইকড়াইল, শিকারপুর, মালা ও বড়ভাগসহ আশপাশের গ্রামের কৃষকরা প্রতিদিন ফসল আনা-নেওয়া করেন। কাঁচা রাস্তাটির বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ দীর্ঘদিনের।

বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা রাস্তাটির কিছু অংশ ইটের সলিং দিয়ে নির্মাণ করলেও অবশিষ্ট প্রায় ৫০০ মিটার এখনও অপরিকল্পিতভাবে কাঁচা পড়ে আছে। একাধিকবার পাকা করার প্রতিশ্রুতি মিললেও বছরের পর বছর তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে হাজারো মানুষ প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এলাকাবাসী দ্রুত রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি জানিয়েছেন।

প্রায় ১৩ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উদ্যোগে রাস্তাটি নির্মাণ করা হলেও আজও পাকাকরণ হয়নি। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি সম্পূর্ণ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। টিটা চরাঞ্চলের একমাত্র যাতায়াতের পথ এটি। এই রাস্তায় প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। রাস্তার বেহাল অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

আশপাশের অন্তত ছয় গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক এ রাস্তা দিয়ে ফসল পরিবহন করেন। বর্তমানে পাট কাটার মৌসুম চলছে। কিন্তু রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে পাট কাটতে পারছেন না। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা-পানিতে রাস্তা একাকার হয়ে যায়। কোথাও কোথাও পানিবন্দিত্বে রাস্তা তলিয়ে কাদার ভাগাড়ে পরিণত হয়।

টিটা গ্রামের গৃহিণী সেলিনা বেগম বলেন, কয়েক দিন ধরে রান্নার গ্যাস শেষ, চালও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। এই রাস্তা দিয়ে কোনো ভ্যান চলতে পারে না, এমনকি হেঁটেও যাওয়া যায় না। এ জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে পারছি না, নানা সমস্যায় পড়েছি।

স্থানীয় টিটা শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বানী মিয়া বলেন, এ বছর বৃষ্টি শুরুর পর কাঁচা সড়কে ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দ হয়ে গেছে। একদিন স্কুলে যেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছি। এরপর থেকে আর সাহস পাচ্ছি না ওই পথে স্কুলে যেতে। প্রাইভেট পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। আমার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী এ রাস্তায় চলাচলে ভয়ে থাকে।

টিটা গ্রামের কৃষক নাছির মিয়া জানান, তার প্রায় তিন একর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এখন তা কাটার উপযুক্ত হলেও রাস্তার কারণে পাট কাটতে সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদে পটু মিয়া বলেন, টিটা ভাসমান সেতু পাড় থেকে টিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ইট বিছিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। অবশিষ্ট অংশ এখনও কাঁচা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। তারা ইট বিছিয়ে রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

টগরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামানও একই কথা জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগত হোসেন সৈকত বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মৌসুম শেষ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে পাকাকরণের ব্যবস্থা করা হবে।

আলফাডাঙ্গা ইউএনও রাসেল ইকবাল বলেন, সরেজমিন গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।